বিয়ের প্রলোভনে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে যশোর জেলা ছাত্রদলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাফার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই তরুণী বাদী হয়ে শুক্রবার (২৩ মে) কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। থানার ওসি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলা করার আগে তরুণী বিয়ের দাবিতে ওই ছাত্রদল নেতার বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিলেন। রাফা যশোর শহরের শংকরপুর সাদেক দারোগা মোড়ের কাওছার আলীর ছেলেকুমিল্লা মডেল থানার আমতলী এলাকার শামসুল হকের মেয়ে ভুক্তভোগী মাহিনুর আক্তার মাহি মামলায় উল্লেখ করেছেন, গত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফেসবুকের মাধ্যমে রাফার সাথে তার পরিচয় হয়। রাফা তার ফেসবুক আইডিতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে তিনি তা একসেপ্ট করেন। ফেসবুকের বন্ধুত্ব থেকে তাদের সু সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে রাফা তার কাছ থেকে মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপের নম্বর নেন। কথপোকথনের মধ্য দিয়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মামলায় আরও বলা হয়েছে, রাফা তাকে বারংবার যশোরে আসার প্রস্তা দিতে থাকে। তার কথা মতো তিনি গত বছরের ৫ অক্টোবর ঢাকা থেকে তিনি যশোরে আসেন। ওইদিন বিকেলে যশোর মনিহার সিনেমা হলের সামনে থেকে রাফা তাকে যশোর আইটি পার্কে বেড়াতে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর আইটি পার্কের ৫ম তলার একটি কক্ষে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বিয়ের প্রলোভনে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। শুধু তাই নয়, রাফা গোপনে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তীতে তাকে জানানো হয় তার কাছে কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও আছে। তার কথা না শুনলে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন।ভিডিও ফাঁসের হুমকি দিয়ে রাফা তার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ফের ভিডিও ভাইরালের হুমকি দেন। ভয়ে তিনি রাফার দেয়া একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ লাখ টাকা প্রদান করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ও বিকাশের মাধ্যমে আনুমানিক ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেন রাফা। সব মিলিয়ে রাফা তার কাছ থেকে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন। কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাফা এড়িয়ে যান। তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন। ওই তরুণী জানান, শুক্রবার (২৩ মে) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে এক বান্ধবীকে সাথে নিয়ে বিয়ের দাবিতে রাফার যশোর শহরের শংকরপুরের বাড়িতে যান। এসময় তার বাবা-মায়ের কাছে সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তারিত খুলে বলেন। রাফার বাবা- মা সম্পর্ক মেনে নেওয়ার কথা বললেও রাফা তার বন্ধুদের মাধ্যমে তাকেবাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি রাতেই যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় আশ্রয় নেন। পরে গভীররাতে রাফার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই তরুণী জানান, বিএনপি একটা সুনামধন্য রাজনৈতিক দল। বর্তমানে ছাত্রদলের নেতারাও সুনামের সাথে রাজনৈতিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। সেখানে সাইফুল ইসলাম রাফার মতো একজন ছিটার বাটপার ও লম্পট কিভাবে সেই দলে স্থান পায় এটা তার বোধগম্য না। রাফার কারণে দলের সুনাম নষ্ট হবে। তিনি দাবি করেন, রাফার অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সমার্থন না করে দলের নেতা কর্মীরা তার পাশে এসে দাঁড়াবেন বলে আশাবাদী। এই বিষয়ে সাইফুল ইসলাম রাফার বক্তব্য নেয়ার জন্য তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। যশোর জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি নাছির উদ্দীন জানান, অভিযোগের বিষয়ে আপনার কাছ থেকে শুনলাম। ঘটনা সত্য হলে রাফার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত জানান, বিয়ের প্রলোভনে তরুণীকে ধর্ষণ ও গোপন ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালের হুমকির ঘটনায় শুক্রবার (২৩ মে) গভীররাতে সাইফুল ইসলাম রাফার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর