জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার যমুনা পাড়ের বাসিন্দা আব্দুল খালেক তার একসময় সবকিছু—নিজের ভিটেমাটি, মাঠ ভরা ফসল , আর হাসিমুখে দৌড়ে আসা ছেলে-মেয়েদের ডাক। সেই উঠোনে বিকেল হলে তার মেয়েটি গান গাইত, আর ছোট ছেলে দৌড়ে এসে বাবার কোলে উঠত। সংসার ছোট ছিল, তবু তাতে ছিল অফুরন্ত সুখ।কিন্তু একদিন শুরু হলো নদীভাঙন, প্রথমে মাঠ গেল, তারপর বাড়ির একাংশ। তবুও আশা ছাড়েননি, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পুরো ভিটে নদীতে মিশে গেল, নিঃস্ব হয়ে পড়লেন। সেই সময় তার বড় ছেলে কাজের সন্ধানে শহরে চলে যায়, মেয়ে বিয়ের পর আর খোঁজ নেয় না। ছোট ছেলেটিকেও একটি আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠাতে বাধ্য হন।সময় গড়ায়, কেউ আর ফিরে তাকায় না। এখন সে একা, পকেটে নেই মোবাইল, চোখে নেই স্বপ্ন। কাঁধে একটা জীর্ণ বস্তা, হাতে দুটি বাঁশের লাঠি আর বুকে এক পাহাড়সম একাকিত্ব নিয়ে দিন কাটে তার। তিনি নদীর পাড়ে বসে আছেন—যে নদী একে একে কেড়ে নিয়েছে তার জমি, ঘর, সন্তান, শান্তি—সবকিছু। চোখে জল নেই, শুধু দৃষ্টিতে জমে থাকা হাজার প্রশ্ন—”কেন এই শাস্তি?”আব্দুল খালেক এর চোখ এখন খালি, সন্তানদের মুখ মনে করতে গেলেও স্মৃতি ঝাপসা হয়ে আসে। কেউ নেই পাশে, কেউ নেই ফিরে চাওয়ার মতো।এ নদী শুধু তার ভিটে নেয়নি, নিয়েছে তার জীবন, তার ভালোবাসা, আর তার চোখের আলো। এখন তিনি শুধু এক ভাঙা নৌকার মাঝি—যার গন্তব্য নেই, শুধু অসীম বেদনার স্রোতে ভেসে চলা। এমআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর