আজ ২১ মে, বিশ্ব চা দিবস। চা প্রেমীদের দিন এটি। চাইলে দিনটি উদযাপনে একত্রিত হতে পারেন, কিংবা মেতে উঠতে পারেন চা আড্ডায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা অফিসের ক্লান্তিতে আমাদের ভরসা এক কাপ চা। যদিও প্রথমে ১৫ ডিসেম্বর ছিল বিশ্ব চা দিবস। ১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম বাঙালি তৎকালীন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে চা-শিল্পে বঙ্গবন্ধু অবদান রাখেন। তার প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় ১৯৫৭ সালে শ্রীমঙ্গলে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ঢাকার মতিঝিলে চা বোর্ডের কার্যালয় স্থাপিত হয়। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০ সালের ২০ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় চা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।ক্লান্ত দেহে যখন অলসতা এসে বাসা বাঁধে তখনই এ আলস্য দূর করতে চাই এক কাপ চা। রিফ্রেশমেন্টের জন্য বা কেউ স্বভাববশতই দিনে কয়েক কাপ চা পান করে থাকেন। আবার অফিসের কাজের ফাঁকে একটু এনার্জি পেতেও অনেকে গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক দেন। সেই চা কীভাবে আমাদের জনপ্রিয় পানীয় হয়ে ওঠে সেদিকে একটু তাকাই। ব্রিটিশ শাসনামলে তখন স্থানীয় বাজারে চায়ের খুব বেশি চাহিদা ছিল না।বাগানের উৎপাদিত বেশিরভাগ চা ব্রিটেন রপ্তানি হতো। এছাড়া তখন এ অঞ্চলে থাকা ব্রিটিশ বা ইউরোপীয় লোকজন চা খেতেন, স্থানীয় অভিজাত গোষ্ঠীও চা খেতে শুরু করেছিলেন। তখনো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে চায়ের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়নি।জেনে অবাক হবেন, চা বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের সবচেয়ে প্রিয় পানীয়। গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে মানুষ ২৫ হাজার কাপ চা পান করে। অর্থাৎ প্রতিদিন দুই বিলিয়ন কাপেরও বেশি চা পান করা হয়।২০০৫ সালে প্রথম চা উৎপাদনকারী দেশগুলো এক হয়ে আন্তর্জাতিক চা দিবস পালন করে।এই দেশগুলো হলো- শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালয়েশিয়া ও উগান্ডা। পরে ২০১৯ সালের ২১ মে বিশ্ব চা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ চা দিবসকে অনুমোদন দেয়। এরপর ২০২০ সালের ২১ মে জাতিসংঘ প্রথমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব চা দিবস পালন করে।ধারণা করা হয়, বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চা পানকারীদের সংখ্যাও বাড়বে। ভারত ও চীনে চায়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। চা পানে এই দুটি দেশ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ অবদান রাখে।চা মূলত চীন থেকে এসেছে। গরম চায়ের আছে একটি দীর্ঘ ইতিহাস: চা নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে- একজন চীনা সম্রাট গরম পানির কাপ নিয়ে একটি গাছের নীচে বসেছিলেন। তখন কিছু কিছু শুকনো পাতা ওই কাপে এসে পড়ে। পরে সম্রাট সেই পানীয় পান করে মুগ্ধ হন। এভাবে গরম চায়ের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যদিও এই গল্প কতটা সত্যি তা বলা মুশকিল। কিন্তু, এটাতো সত্যি কথা যে- শত শত বছর ধরে মানুষ গরম চা পান করে আসছেন।বছরের পর বছর ধরে চা নিয়ে নানান গবেষণা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গরম পানির সঙ্গে গুল্ম ও পাতা মিশিয়ে পান করা হয়েছে। কিন্তু চায়ের সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণ গরম পানির সঙ্গে কয়েক টুকরো চা পাতার মিশিয়ে পান করা। এই পাতা ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এশিয়ায় গরম চা পান শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে। আর ষোড়শ শতাব্দীর আগে ইউরোপে চা প্রবেশ করতে পারেনি।১৬০০-এর দশকে ইংল্যান্ডের মানুষ এই সুস্বাদু পানীয়টির প্রেমে পড়তে শুরু করেন এবং এটি আধুনিক শ্রেণির জনপ্রিয় পানীয় হয়ে উঠতে শুরু করে। ব্রিটিশ ভারতে চায়ের উৎপাদন প্রবর্তিত হয়। শুধু তাই নয় তখন বিশ্বব্যাপী এটি একটি শিল্প হয়ে ওঠে।এইচএ
Source: সময়ের কন্ঠস্বর