মাষ্টাস পাশ করা অসুস্থ মেধাবী সন্তানকে বাঁচাতে সরকারসহ বিত্তবানদের কাছে গরীব অসহায় বাবা-মা আকুতি জানিয়েছেন। তাদের একমাত্র সন্তান মেধাবী শিক্ষার্থী মুকুল চন্দ্র রায় গত দশ মাস ধরে প্যানক্রিয়াস রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সন্ধিকটে দিন পাড় করেছেন।বর্তমানে অসুস্থ শিক্ষার্থী প্যানক্রিয়াস রোগটি গুটি গুটি আকারে পানি জমে ইনফেকশন হয়ে খাদ্যনালী ফুলে গেছে। এছাড়াও তিনি লিভার সিরোসিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় হতদরিদ্র পরিবারটি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে রংপুর ও ঢাকার পুপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিএসএমএমইউ (পিজি হাসপাতাল) এর পেট লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ ও প্রাক্তন অধ্যাপক, চেয়ারম্যান প্রসেসর এ.এস.এম.এ.রায়হানের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলেও অর্থের অভাবে সঠিকভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারেনি দরিদ্র পরিবারটি।তবে চিকিৎসক জানিয়েছেন তার উন্নত চিকিৎসা করা খুবই জরুরি। রোগীর উন্নত চিকিৎসা দেশে কিংবা ভারতে চিকিৎসা করালেই সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুন বেশি।অসুস্থ মেধাবী মুকুল চন্দ্র রায়ের উন্নত চিকিৎসা করাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন। তার এই চিকিৎসার ব্যয় গত দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে ধার-দেনা করে রংপুর ও ঢাকাতে চিকিৎসা করাতে দেড় থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা খচর হয়েছে। মুকুলের চিকিৎসা করার টাকা জোগাড় করা ওই পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একমাত্র সন্তানের সুচিকিৎসা করাতে না পেরে বাবা-মা চরম চিন্তায় পড়েছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিষামত শিমুলবাড়ী গ্রামে অসুস্থ মেধাবী শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মরণব্যাধী রোগে আক্রান্ত শিক্ষার্থী মুকুল চন্দ্র রায় একটি জরাজীর্ণ টিনসেট ঘরে বিছানায় বসে শুয়ে দিন পাড় করেছেন। বাড়িতে কেউ নেই। তার বাবা-মা কোথায় গেছে জানতে চাইলে, অসুস্থ শিক্ষার্থী মুকুল হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলেন, কি বলবো, আমাদের পোড়া কপাল, ভাগ্যও খারাপ। আমার বাবা দিন মজুরের কাজে গেছেন। আমার মা তিনিও পাশের একটি বাড়িতে কাজ করছেন। কি বলবো, বলার ভাষা নেই, আমার বাবা মানুষের খেতে খামারে রোদ-বৃষ্টিতে হাঁড় ভাঙা পরিশ্রম করে আমার পড়াশুনা খরচ চালিয়েছেন। মাও প্রত্যেকটা দিনও রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করেন। বাবা-মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের টাকায় আমার পড়াশুনার খরচ জোগান দিয়েছে। পড়াশুনা শেষে সরকারি চাকুরী করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পুরণ করবো। এই লক্ষ্যে অনেক কষ্টে মাঝে মধ্যে প্রাইভেট ও আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় ২০১১ নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এসএসসিতে জিপি-এ ৪.৫৬, ২০১৩ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এইচ এসসিতে ৪.৪৯, ২০২৭ সালে রংপুর সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্সে সিজিপি-এ ২.৭২ ও ২০২৮ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ইংরেজি বিভাগের মাষ্টাসে সিজিপি-এ ২.৬৩ উত্তীর্ণ হয়েছি। মাষ্টাস পাশ করার পর বাবা-মা স্বপ্ন পুরণের জন্য ঢাকায় চার বছর ছিলাম। ঢাকার একটি বেসরকারী স্কুলে স্বল্প বেতনে চাকুরী করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরীর পড়াশুনা ও আবেদনও করেছি। ২০২৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সহ দুইটি সরকারি চাকুরী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছি এবং ভাইবা পরীক্ষাও ভালোই দিয়েছি। আমার চাকুরী হবে আমি খুবই আশাবাদীও ছিলাম। কিন্তু কপাল পোড়া আমার ভাগ্যে চাকুরী জোটেনি। তাই আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পুরণ করতে পারিনি। এরপর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আমি প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন ডাক্তারের চিকিৎসা নেয়ার পরেও আমার জ্বর ভালো হয়নি। কিছু টাকা জোগাড় করে রংপুরে ভালো ডাক্তার দেখাই। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার করার পর প্যানক্রিয়াস রোগ ধরে পড়ে। অসুস্থ থাকলেও কোন না কোন ভাবে আমি আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পুরণ করতে পারতাম। কিন্তু ঈশ্বর যে রোগ দিয়েছে। এই রোগের চিকিৎসা করাতে ডাক্তার বলেছে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা লাগবে। এতোগুলো টাকা আমার বাবার পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সুস্থ হবো কি না জানি না। বাবার এক ছটাকো জমি নেই। এভাবে বলতে বলতে স্বজোড়ে কান্না ভেঙে পড়েন মুকুল। এ সময় কান্না জড়িত কন্ঠে মুকুল চন্দ্র রায় তার চিকিৎসার খরচ সরকারসহ বিত্তবানদের আকুতি জানিয়েছেন। মানুষ মানুষের জন্য, আপনাদের সবার সহযোগিতায় একজন মনুষ্য রোগী সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে।অসুস্থ শিক্ষার্থী মুকুল চন্দ্র রায়কে সহযোগিতা করতে বা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে এই নাম্বারে যোগাযোগ করবেন- ০১৫৫১০৫৪১২৩ (বিকাশ) ও ০১৩১৭৩১৯১১৫। মুকুলের মা মোহনী বালা কান্নাজড়িত কন্ঠে প্রতিবেদক জানান, ঘরে একটা টাকাও নেই। যে কয়টাকা ছিল সব খরচ হয়ে গেছে। এখন আর পারছি না। ধারদেনাও হয়েছে। আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এমন অবস্থায় যদি কেউ এগিয়ে আসতেন তাহলে একমাত্র ছেলের চিকিৎসা করাতে পারতাম। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশু আরও বলেন, একটা আশা ছিল একদিন ছেলেটা একটা সরকারি চাকুরী করে আমাদের দু:খ কষ্টে দুর করবে। এখন আর কোনো আশা নেই। এখন শুধু আমার ছেলেটি ভালো হয়ে যাক। চোখের সামনে ছেলেটির কষ্ট দেখলে আর সহ্য হয় না বাহে। তার মুখের দিকে তাকালেই কান্না চলে আসে। আমি আমার ছেলেটিকে বাঁচাতে চাই। যদি কেউ আমার এই অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেন তার কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।মুকুলের বাবা শুশীল চন্দ্র রায় জানান, কি বলবো, চোখের সামনে ছেলেটার কষ্ট আর সইতে পারছি না। ১০ মাস ধরে সন্তানের চিকিৎসা চালাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব তিনি। এখন টাকার অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা করাতেও পারছেন না। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান আমার বাড়ী শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের মরানদী এলাকায় ছিল। সেখানে আমাদের যেটুকু জমিজমা ছিল সব কিছুই কেড়ে নিয়েছে ধরলা নদী। সেখানে সব হারিয়ে প্রায় ৩০ বছর আগে এখানে আমার (শ্বশুর) বাড়ির পাশে পাঁচ জমি নিয়ে বসবাস করছি। এক ছেলে ও এক মেয়ে। অনেক কষ্টে মেযেটার বিয়ে দিয়েছি। ছেলের পড়াশুনা ও মেয়ের বিয়েসহ জীবন জীবিকা নির্বাহ ছিল খুবই করুন। না খেয়ে কতদিন গেছে বলে শেষ করতে পারবো না। তারপরও একমাত্র সন্তানকে অনার্স, মাষ্টাস পাশ করেছি। ছেলের পড়াশুনাসহ পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে করতে বাড়ি চালা পাঁচ শতক জমি এখনো নিজের নামে নিতে পারিনি। যদি জমিটুকু নিজের নামে থাকতো তাহলে বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করাতাম। কপাল খারাপ বাহে। তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকার ও দেশ-বিদেশ থাকা বিত্তবানদের কাছে কড়ো জোড়ে আকুকি জানিয়ে।কিষামত শিমুলবাড়ী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাশেদুল ইসলাম বলেন, অনেক কষ্ট করে একমাত্র সন্তানকে খেয়ে না খেয়ে মানুষ করেছেন। ভাগ্যের কি নিমর্ম পরিহাস একমাত্র সন্তান বাবা-মায়ের সামনে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতাড়াচ্ছেন। যে সংসারে নুন আন্তে পানতা ফুড়ায়, সেই পরিবার থেকে চিকিৎসার খরচ জোগানো একেবারে অসাধ্য। তাকে সহযোগিতা করার ব্যাপারে আমি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করবো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, এই মুহূর্তে তাকে সহযোগিতা করার মতো বরাদ্দ নেই। ওই পরিবারের পক্ষ থেকে অসুস্থ শিক্ষার্থীর যাবতীয় তথ্যসহ একটি আবেদন করার পরামর্শ দেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দ আসলে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন ইউএনও।এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর