জ্যৈষ্ঠ মাসকে বলা হয় ‘মধু মাস’। এই সময়েই বাজার ভরে ওঠে আম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা রসালো মৌসুমি ফলে। তবে বরিশালের বাজারে এখন যে ফল পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর বেশিরভাগই অপরিপক্ব এবং রাসায়নিক দিয়ে কৃত্রিমভাবে পাকানো। ভোক্তারা বলছেন, ফল কাটার পরই বোঝা যায় এগুলো পরিপক্ব নয়। আবার স্বাদেও নেই কাঙ্ক্ষিত মিষ্টতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ফল খাওয়ার মাধ্যমে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই তেমন কোনো তৎপরতা বা নজরদারি।বরিশাল জেলাজুড়ে প্রতিদিনই আসছে আম, লিচু, কাঁঠালসহ বিভিন্ন জাতের ফল। কোনোটার রঙ গাঢ় হলুদ, কোনোটা আবার টকটকে লাল। বিক্রির জন্য ফলগুলোকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বাজারের দোকানে দোকানে। এই ফল দেখে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতারা প্রতিদিন কিনে বাড়ি ফিরছেন হাসিমুখে। কিন্তু কাটার পর মুখে দিতেই বোঝা যায় রসালো ফলটি অপরিপক্ক, কৃত্রিমভাবে পাকানো।শুধু আম নয়, মৌসুমি প্রায় সব অপরিপক্ক ফলই এখন বিষে ভরা। কাঁঠাল, কলা, পেঁপেসহ বেশিরভাগ ফলেই মেশানো হচ্ছে কেমিক্যাল। বিশেষ করে বাজারে আসতে শুরু করেছে সাতক্ষীরার আম হিমসাগর আম। খাওয়ার উপযোগী না হলেও দৃষ্টিনন্দন রঙের মোহে প্রতিদিন ক্রেতারা যেন বিষ কিনে নিয়ে যান প্রিয়জনের জন্য।বরিশাল নগরীর পোর্ট রোর্ড ফলের আড়তগুলো ঘুরে দেখা যায়, রঙ-বেরঙের ফল দেখে মনে হয় এ এক ফলের রাজ্য। দোকানের টুকরিতে সাজানো টসটসে লাল রঙের আম ধরলেই হাতে উঠে আসে সাদা রংয়ের পাউডার। কেমিক্যালসহ বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যাল দিয়ে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে টনকে টন আম সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এই আম প্রতিদিন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চলে যাচ্ছে।অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকানোর কাজটি এমন কৌশলে করেন যেন ক্রেতারা বুঝতে না পারেন। রাসায়নিক মেশানোর পর একদিনের মধ্যে ফল পেকে যায় বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।ফল ব্যবসায়ী বাবুল জানান, স্বাভাবিকভাবে ফল পাকতে দিলে বিক্রির জন্য অপেক্ষমান সময়ে অর্ধেকের বেশি ফল নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাঁচা অবস্থায় কিনে আনা ফল পাকানোর জন্য কৃত্রিম পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। এই পদ্ধতি দেশের সব জায়গাই আছে।ফলপট্টির এক ফল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানান, মৌসুমি ফল বাজারে এলে প্রথম দিকে দামটা একটু বেশি থাকে। এখন যে ফল বিক্রি করছি প্রায় সব আমে কেমিক্যাল মেশানো হয়। ক্রেতা ধরে রাখতে বাধ্য হয়ে এভাবে বিক্রি করতে হচ্ছে।নগরীর কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা সোহেল শিকদার বলেন, আমের স্বাদ ও লোভনীয় ঘ্রাণ মুগ্ধ করে সবাইকে। বাজারে ফলের দোকানে, রাস্তার ধারে হকারের ডালায় সাজানো থাকে আম। কিন্তু এই আম খেতে গেলেই মানুষের মনে একটা আতঙ্ক কাজ করে ‘রাসায়নিকে পাকানো নয় তো!’ বাস্তবতা হচ্ছে, অধিক মুনাফার আশায় গাছ থেকে অপরিপক্ব আম পেড়ে কার্বাইড বা ওই জাতীয় রাসায়নিক প্রয়োগ করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে আম পেকে সুন্দর রঙ ধারণ করলেও এই আম খেতে মোটেও সুস্বাদু নয়।বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, আম পাকানোর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড ইনজেকশন দেওয়া হয়। আর্দ্রতার সংস্পর্শে এলে এটি অ্যাসিটিলিন নামক গ্যাস ছড়ায়। এতে আম দ্রুত পাকে। এটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। ত্বকের জ্বালা, শ্বাসকষ্ট এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলো দেখা দেয়। আবার ফল ব্যবসায়ীরাও আম ও অন্যন্য ফল পাকাতে ‘ইথিলিন ট্রিটমেন্ট’ ব্যবহার করেন। এ সময় ফলকে ইথিলিন গ্যাসের সংস্পর্শে আনা হয়। আমের মাধ্যমে এসব রাসায়নিক উপাদান শরীরে গেলে ত্বকের ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসার, লিভার ও কিডনির সমস্যা, মস্তিষ্কের ক্ষতির মতো মারাত্মক রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।  এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা কেমিক্যাল দিয়ে ফল পাকাচ্ছে বিষয়টি শুনে যাচ্ছি। তবে ফলে কেমিক্যাল দেওয়া হচ্ছে কিনা এটা পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব বিএসটিআই কর্তৃপক্ষের। তবে শিগগিরই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে অভিযানে নামবে।তবে মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল বিষযুক্ত কেমিক্যাল দেওয়া হচ্ছে বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানালেন বরিশাল বিভাগীয় বিএসটিআই অফিসের উপপরিচালক (মেট্রোলজি) ও অফিস প্রধান মো. আব্দুল হান্নান।তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর পাকা আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। তাই কেমিক্যালযুক্ত আম বাজারে নেই বলেই চলে। তবে ফলে বিষযুক্ত কেমিক্যাল দেওয়া হচ্ছে কিনা এটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এটা দেখার দায়িত্ব হলো কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের।অন্যদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বরিশাল কার্যলয়ের উপ-পরিচালক এস এম মাহাবুব আলম বলেন, আমাদের দপ্তরে ফল টেস্ট করার মত কোন যন্ত্র অথবা দক্ষলোক নেই। আমাদের কোন কৃষিবিদ অথবা প্রশাসনিক ক্ষমতাও নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে আলাপ করবো। এটা দেখার দায়িত্ব হলো বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের।জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বরিশাল জেলা কার্যালয়ের নিরাপদ খাদ্য অফিসার গোলাম রাব্বি বলেন, আমাদের দপ্তরে ফল টেস্ট করার মত কোন যন্ত্র বা কীড নেই। তাই আমাদের ফলের ক্ষেত্রে সতর্ক করা ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এসকে/আরআই

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
বরিশালের বাজারে সরবরাহ বেড়েছে তরমুজের
বরিশালের বাজারে সরবরাহ বেড়েছে তরমুজের

চলছে পবিত্র রমজান মাস। ইফতারির পণ্যে সরগরম বাজার। ইফতারে মুখরোচক ভাজাপোড়া খাবারের সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে দেশি-বিদেশি ফলের। এ তালিকায় তরমুজের Read more

এক লাখ কোটি টাকার কোরবানির অর্থনীতি
এক লাখ কোটি টাকার কোরবানির অর্থনীতি

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদের অর্থনীতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে অটোর চাপায় শিশুর মৃত্যু
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে অটোর চাপায় শিশুর মৃত্যু

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় অটোরিকশার চাপায় রাকেশ (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে Read more

দুই সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করলেন মা
দুই সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করলেন মা

গাজীপুরের টঙ্গীতে দুই শিশুকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন তাদের মা সালেহা বেগম।এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। নিহত দুই ভাই-বোন Read more

সাংবাদিকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
সাংবাদিকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন