ভূঞাপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে নিজের ছাত্র রাজনীতির দীর্ঘ পথচলা, ত্যাগ এবং বর্তমান নেতৃত্বের আচরণ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ভোরে দেওয়া স্ট্যাটাসটি স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।রাকিব হোসেন বলেন, ২০১০ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় আমি। তখন ভূঞাপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। পরে পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। কলেজ জীবনেও করটিয়ার সরকারি সা’দত কলেজ ছাত্রদলের আইনবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। বর্তমানে আমি উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। ছাত্র রাজনীতির এই দীর্ঘ পথে কোনো দিন বিরোধী দলের সঙ্গে আপোষ করিনি।তিনি বলেন, নেতারা বলত ‘হ্যালো রাকিব, আগামীকাল প্রোগ্রাম আছে—হরতাল, অবরোধ, আন্দোলন, মশাল মিছিল, সমাবেশ—বেশি করে লোক নিয়ে আসতে হবে।’ দলের এমন দুঃসময়ে যখন কেউ পাশে ছিল না, তখন আমি ছাত্রদলের হয়ে রাজপথে ছিলাম। বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কাছে আমি ছিলাম সাহসী ও প্রিয় ছাত্রনেতা। কারো কাছে কলিজার ভাই। তখন ৮-১০ জনে মিছিল করে পালিয়ে বেড়াতাম। গত আগস্টে আন্দোলনের সময়কার নিজের একটি ছবি সংযুক্ত করে রাকিব তার স্ট্যাটাসে নিজের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও সিনিয়রদের নাম উল্লেখ করে বলেন, আমি এখনও নেতা হিসেবে মানি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, মো. সেলিমুজ্জামান সেলু, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, লুৎফর রহমান গিয়াস, খন্দকার জুলহাস, আলীম, কফিল ভাইসহ অনেককেই। এদের কেউ আমার ভাই বা আত্মীয় নন, আমিই পরিবারের একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই ‘পঁচা রাজনীতিতে’ যুক্ত।এই ছাত্রদল নেতা ভাষায়, ‘এই সংগঠন করতে এসে আমি কোনো দিন টাকা বা সুবিধা চাইনি, কেউ বলতে পারবে না আমি কারও কাছে হাত পেতেছি। যখন নেতাদের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে যেত, যখন পুলিশের ভয়ে মার খাওয়ার ভয় ছিল, আমি তখন পাশে ছিলাম। পড়াশোনা শেষ করেও তাদের পাশে থাকতাম। এখন আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।’ রাকিব আরও লিখেছেন, ‘আজ যারা নেতা হচ্ছেন, তারা অধিকাংশই হয়তো ৫ আগস্টের পর ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। যাদেরকে নিয়ে আপনারা সুলতান সালাউদ্দীন টুকু ভাই এবং এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু ভাইয়ের সামনে হাইলাইট করাতে ব্যস্ত। তাদের গলায় ঝুলছে কার্ড, আর আমি উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েও কার্ড পাই না। বিএনপির বর্ধিত সভায় প্রবেশ করতে এসব পাতি নেতার অনুমতি লাগে। গেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এটা আমার জন্য অপমানজনক। এর জন্য এতো বছর এই সংগঠনের সাথে ছিলাম। যদি এই বৈষম্য আপনারা করবেন তাহলে তখন আপনার এসব ছাত্র নেতারা কোথায় ছিল।’ ছাত্রদলের অভ্যন্তরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার অভিযোগও তোলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রদলের আলমগীর ও শাহীন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। যদি আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়ে থাকে, তবে আমি নিজে থেকেই সংগঠন থেকে পদত্যাগ করতে চাই। দীর্ঘ স্ট্যাটাসের সঙ্গে এই ছবিটি যুক্ত করে দেন রাকিব। স্ট্যাটাসের শেষাংশে রাকিব হোসেন স্পষ্ট ভাষায় লেখেন, আপনাদের এই চাটাচাটি, তেল মারা এবং দালালি করার জন্য ছাত্রদল করি নাই। আর যদি দূর্বল ভেবে থাকেন তাহলে আরেকটা কথা বলি এতো বছর সাহস করে যখন ছাত্রদল করতে পারছি তাহলে আপনার সামনেও দাঁড়াতে পারবো, সেইদিন আপনি কে দেখবো না। রাকিব হোসেনের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি স্থানীয় ছাত্রদলসহ বিএনপি-অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের মধ্যে আলোচনার ঝড় তুলেছে। অনেকেই তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, আবার কেউ কেউ অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের পক্ষপাত ও ত্যাগীদের উপেক্ষার অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ লিখেছেন, ‘আহারে রাকিব!’, আবার কেউ কটাক্ষ করে মন্তব্য করেছেন, ‘হাইব্রিড জিন্দাবাদ!’ তবে এ বিষয়ে জানতে ভূঞাপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি কল রিসিভ করলেও ‘ব্যস্ত আছি’ বলে লাইনটি কেটে দেন।এসকে/আরআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর