চোটের ছোবলে একগাদা ফুটবলার বাইরে। তারপরও ম্যাচ জুড়ে আক্রমণের ঝড় বইয়ে দিল রেয়াল মাদ্রিদ। যদিও মায়োর্কা গোলরক্ষকের একের পর এক দুর্দান্ত সেভে একসময়ে হারও চোখ রাঙাচ্ছিল তাদের। কিলিয়ান এমবাপে দলকে ম্যাচে ফেরানোর পর শেষ সময়ে বল জালে পাঠালেন ইয়াকোবো রামন। রোমাঞ্চকর জয়ে লা লিগার শিরোপা লড়াই আরেকটু হলেও জিইয়ে রাখল কার্লো আনচেলত্তির দল।সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে বুধবার রাতে লিগ ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতেছে রেয়াল মাদ্রিদ।মার্তিন ভালিয়েন্ত শুরুতে মায়োর্কাকে এগিয়ে নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে চমৎকার গোলে সমতা ফেরান এমবাপে। যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে ব্যবধান গড়ে দেন রামন। রেয়ালের হয়ে ২০ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের প্রথম গোল এটি।এই ম্যাচে রেয়াল জিততে ব্যর্থ হলে, মাঠে না নেমেই তিন ম্যাচ বাকি থাকতে লিগ শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যেত বার্সেলোনার। হান্সি ফ্লিকের দলের অপেক্ষা একটু বাড়ল। অবশ্য বৃহস্পতিবার এস্পানিওলের বিপক্ষে জিতলেই শিরোপা পুনরুদ্ধার করবে কাতালান দলটি।৩৬ ম্যাচে ২৪ জয় ও ৬ ড্রয়ে ৭৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে রেয়াল। ৩৫ ম্যাচে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে চূড়ায় বার্সেলোনা।মায়োর্কার বিপক্ষে ৭১ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য মোট ৩৯টি শট নেয় রেয়াল, যার ১৩টি ছিল লক্ষ্যে। ১০টি সেভ করেন গোলরক্ষক লিও রোমান। সফরকারীদের ৪ শটের ২টি লক্ষ্যে ছিল।ভিনিসিউস জুনিয়রসহ চোট ও নিষেধাজ্ঞা মিলিয়ে মূল দলের মোট ১২ জন খেলোয়াড়কে এই ম্যাচে পায়নি রেয়াল। যাদের অনেককে পাওয়া যাবে না মৌসুমের বাকি অংশেও।গত রোববার বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪-৩ গোলে হারা রেয়াল তৃতীয় মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগ পায়। নিজেদের অর্ধ থেকে আর্দা গিলেরের থ্রু বল ধরে, প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে গতিতে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে পড়েন এন্দ্রিক। তরুণ এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন মায়োর্কা গোলরক্ষক।রক্ষণের দুর্বলতায় একাদশ মিনিটে গোল হজম করে রেয়াল। ডান দিক থেকে মায়োর্কার সামু কস্তার শট বক্সের বাইরে রেয়াল ডিফেন্ডার ফ্রান গার্সিয়া গতি রোধ করলেও ভেতরে আলগা বল পেয়ে যান অরক্ষিত মার্তিন ভালিয়েন্ত, বাঁ পায়ের শটে দূরের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন তিনি।এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৭৬ গোল হজম করল রেয়াল, ২০০৩-০৪ মৌসুমের (সেবারও ৭৬) পর যা তাদের সর্বোচ্চ। লা লিগার দলগুলোর মধ্যে এবার তাদের চেয়ে বেশি গোল হজম করেছে কেবল রেয়াল ভাইয়াদলিদ (৯২)।১৯তম মিনিটে আরেকটি সুযোগ পায় রেয়াল। কিলিয়ান এমবাপের পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের ভেতর থেকে জুড বেলিংহ্যামের জোরাল শট ব্যর্থ করে দেন গোলরক্ষক লিও রোমান।৩৫তম মিনিটে আরেকবার বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন বেলিংহ্যাম, তবে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জে শট নিতে পারেননি ইংলিশ মিডফিল্ডার। পরের মিনিটে উড়িয়ে মারেন এমবাপে। একটু পর বক্সের বাইরে থেকে লুকা মদ্রিচের গোলা ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন রোমান।বল দখলে রেখে একের পর এক আক্রমণ করে যায় রেয়াল। কিন্তু বারবার তাদের সামনে বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান রোমান। প্রথমার্ধের শেষ দিকে দুই মিনিটের ব্যবধানে বক্সের বাইরে থেকে এমবাপে ও ফেদেরিকো ভালভার্দের শটও ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি।এমবাপের দারুণ গোলে ৬৮তম মিনিটে সমতায় ফেরে রেয়াল। মদ্রিচের পাস ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। দুই পাশে প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডার, কাছাকাছি আরও দুজন, সব চ্যালেঞ্জ সামলে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন বিশ্বকাপ জয়ী তারকা।এবারের লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা এমবাপের গোল হলো ২৮টি, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪০টি। চিলির ইবান সামোরানোকে (৩৭) ছাড়িয়ে রেয়ালের হয়ে অভিষেক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিকের পথেই গড়েন তিনি।পরের মিনিটে আবার এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় মায়োর্কা। কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি মাতেউ মোরে। এগিয়ে এসে তার প্রচেষ্টা এক হাতে ঠেকান থিবো কোর্তোয়া।৭৮তম মিনিটে বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে তরুণ তুর্কি গিলেরের বুলেট গতির শট আরেকটি দুর্দান্ত সেভ করেন রোমান। ৮৭তম মিনিটে রেয়াল দ্বিতীয় গোল পেয়েই যাচ্ছিল প্রায়। এমবাপের প্রচেষ্টা গোলপোস্টের সামনে থেকে হেডে ক্লিয়ার করেন ভালিয়েন্ত।পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে রামনের ওই গোল। রেয়ালের কর্নার ক্লিয়ার হওয়ার পর বাঁ দিক থেকে সতীর্থের ক্রসে বক্সের ঠিক বাইরে হেড করেন বদলি খেলোয়াড় হেসুস ভালেহো, মায়োর্কার ডিফেন্ডার ওপরে বলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, তার পেছন থেকে দারুণ ভলিতে বল জালে পাঠান রামন। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা বের্নাবেউ। ৩৬ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থানে আছে মায়োর্কা।এমআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর