ধর্ষণ শুধু শারীরিক সহিংসতা নয় বরং এটি একটি ভয়াবহ সামাজিক অপরাধ। যা ভুক্তভোগীর মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক জীবনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। খবরের পাতা খুললেই কিংবা টেলিভিশনের খবরে প্রতিদিনই অসংখ্য যৌন সহিংসতার ঘটনা চোখে পড়ে। যার মধ্যে রয়েছে শিশু, কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা।বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এর বিপরীতে ন্যায়বিচারের হার আশঙ্কাজনকভাবে কম। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বিভিন্ন আইন ও সামাজিক আন্দোলন থাকলেও ধর্ষণের ঘটনা কমছে না বরং পরিবর্তিত রূপে সমাজে বিস্তার লাভ করছে। ধর্ষন নিয়ে কি ভাবছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থীরা? শিক্ষার্থীদের সেই ভাবনার কথাগুলে তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক – মো. রাকিবুল ইসলাম।ধর্ষণ শুধু একটি শব্দ নয় এটি এক ভয়াবহ অভিশাপ-ধর্ষণ শুধু একটি শব্দ নয় এটি এক ভয়াবহ অভিশাপ, এক নিঃশব্দ আর্তনাদ। যা প্রতিদিন আমাদের সমাজকে কলঙ্কিত করছে। বাংলাদেশে ধর্ষণ কেন বাড়ছে? কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যায় আইনের দুর্বলতা, অপরাধীর দম্ভ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সামাজিক অবক্ষয়—সব একসঙ্গে মিলে ধর্ষকদের সাহস জোগাচ্ছে। ধর্ষকরা জানে তাদের ভয় নেই। কারণ বিচার হবে না, শাস্তি হবে না, সমাজ তার পক্ষ নেবে। আর যারা ধর্ষিত তারা চুপ থাকবে, সমাজ তাদেরই দোষ দিবে। একটি মেয়ে যখন ধর্ষিত হয় তখন শুধু তার শরীর না, তার আত্মা, তার স্বপ্ন, তার ভবিষ্যৎ—সব টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সে বেঁচে থেকেও মৃত, সমাজ তাকে আঙুল তুলে দেখে। কী পরেছিল, কোথায় গিয়েছিল, কেন হাসছিল—এসব প্রশ্ন ওঠে সেই মেয়েটির দিকে। কিন্তু ধর্ষকের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না! আমরা কি ভীরু? কেন আমরা চুপ থাকি? আজ যদি প্রতিবাদ না করি তাহলে কাল আমাদের মা-বোনও এই বর্বরতার শিকার হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতেই হবে। ধর্ষকদের শাস্তি এমন হতে হবে যেন আর কোনো নরপিশাচ ধর্ষণের সাহস না পায়। ধর্ষণ বন্ধ করতে আইন শক্ত করতে হবে, বিচার দ্রুত করতে হবে। ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করে সমাজকে বদলাতে হবে। না হলে এই অন্ধকার আমাদের সবাইকে গ্রাস করবে। চুপ থাকা মানেই অপরাধীদের পক্ষ নেওয়া—তাই আওয়াজ তুলুন, রুখে দাঁড়ান।(আহনাব মুনতাসীর, অর্থনীতি বিভাগ)নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন থাকা সত্ত্বেও প্রয়োগ নেই-“নারী শক্তি”, “নারী ক্ষমতায়ন” – এমন শব্দবন্ধ বড় বড় সেমিনারে, আলোচনা সভায় আমরা প্রায়ই শুনি। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? আজকের বাংলাদেশে নারীরা কি সত্যিই শক্তিশালী? উন্নয়নের পরিসংখ্যান ও গল্পের আড়ালে চাপা পড়ে যাওয়া বাস্তবতার দিকে তাকালেই বিষয়টি পানির মতো পরিষ্কার! আজকের বাংলাদেশে কোন বয়সের নারীই নিরাপদ নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধা- কেউই ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, শারীরিক নির্যাতন থেকে মুক্ত নয়। রাস্তাঘাট, পরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র – কোথায় নারীরা নিরাপদ? সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরা, একা ভ্রমণ, নিজের ইচ্ছামতো পোশাক – এসব কি আজও নারীদের জন্য স্বাভাবিক? নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বেশ কিছু আইন থাকা সত্ত্বেও প্রয়োগ কতটুকু? অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ স্টেশনে নারীদের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। বিচার প্রক্রিয়া এতই দীর্ঘ যে, অধিকাংশ ভুক্তভোগী বিচার চাইতেই ভয় পায়। গার্মেন্টস শিল্পে ৮০% নারীর অংশগ্রহণ, শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা, খেলাধূলায় নারীদের জয়- বিষয়গুলো গর্বের হলেও ৮ বছরের কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়! তাই, শুধু উন্নয়নের পরিসংখ্যান নিয়ে গর্ব না করে, বাস্তব অবস্থা মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। নারীদের শক্তিশালী হতে সাহায্য করতে হবে ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।(রবিন শেখ, আইন বিভাগ)ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি-বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আমাদের সামাজিক অবক্ষয় ও আইনের দুর্বলতার একটি বড় উদাহরণ। এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রাষ্ট্রের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের ব্যর্থতা আর বিকৃত মানসিকতা। নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, নিপীড়ন—এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং এটি সমাজের পচনশীল মানসিকতার প্রতিফলন। আর এই অন্যায় যখন বারবার ঘটে তখন চুপ করে থাকা মানে অপরাধীদের সাহস দেওয়া। আমরা কি শুধু শোক, প্রতিবাদ, মোমবাতি জ্বালিয়েই দায়িত্ব শেষ করবো না এই ব্যবস্থাকে বদলানোর জন্য রুখে দাঁড়াব? ধর্ষণ শুধু একটি শরীরের ওপর আক্রমণ নয় এটি একটি আত্মার হত্যা। ধর্ষণ শুধু একজন নারীর সমস্যা নয় এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। যা পুরো সমাজের জন্য হুমকি। এই ভয়াবহ অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর আইন, সামাজিক সচেতনতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যেনো নারীরা নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারেন।(ঈশিকা খান, অর্থনীতি বিভাগ)এদেশ নারী পুরুষ সকলের-ফেসবুকে প্রতিদিনই একটা না একটা ধর্ষণের খবর সব সময়ই থাকে। এমন তো দেশের অবস্থা ছিল না। এই স্বাধীনতা তো কাম্য ছিল না! তবে আজ কেন এই অবস্থা? আজকে যারা ক্ষমতার বিশেষ আসনে আছেন, যারা নতুন দল গঠন করেছেন, যারা ছাত্রদল বা কর্মী বা সংগঠক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় আছেন, যারা চাচ্ছেন দেশে ইসলামী শাসন কায়েম হোক তাহলে ধর্ষকদের জন্য ইসলামী আইনে সর্বোচ্চ বিচারের ব্যবস্থা করা হোক জনসম্মুখে। এ দেশ শুধু পুরুষদের নয়, এদেশ শুধু নারীর নয়; এদেশ নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের। নারী কোন ভোগ পণ্য নয়, নারীকে মানুষ ভাবতে শিখুন। মাকে আপনি যেভাবে সম্মানের কথা চিন্তা করেন, নিজের মেয়েকে নিয়ে যেভাবে চিন্তা করেন, বাইরে রাস্তায় একটা মেয়ে দেখলেও সেই একই সম্মানের কথা চিন্তা করবেন। এই দেশে প্রতিনিয়ত অভ্যাসের মতো ধর্ষণ একটি ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন ঘটছে এই ঘটনা তাহলে বলব সামাজিক অবক্ষয় এবং আইনের অপব্যবহার। যদি ঠিকঠাক আইনের ব্যবস্থা থাকত, যদি ঠিকঠাক শাস্তির ব্যবস্থা থাকত তাহলে মনে হয় না এমন কাজ করার কোন সাহস কেউ পেত। আমি সত্যিই জানিনা নারী হিসেবে বেঁচে থাকতে গেলে কেন সেটা নিয়ে আন্দোলন করতে হবে? কেন সেটা নিয়ে আইন চাইতে হবে? কেন সেটি নিয়ে অধিকার চাইতে হবে?(পারভীন সরকার, অর্থনীতি বিভাগ)ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হোক-দেশে ভয়াবহ আকার ধারন করছে ধর্ষণ। যাদের লালসা থেকে একটা বাচ্চা পর্যন্ত মুক্তি পায় না তাদের জন্য ফাঁসি খুব সামান্য শাস্তি বলে আমি মনে করি। তাদেরকে প্রকাশ্যে পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হোক। সরকারকে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই রাষ্ট্রপতির হাতে জরুরি অবস্থা জারি করার ক্ষমতা রয়েছে, সেটি যদি সে এই ক্রান্তিলগ্নে প্রয়োগ করতে না পারে তাহলে আমাদের সংবিধানে ৯৩ এবং ১৪১ ধারা কেন রাখা হয়েছে? আমরা আমাদের সমাজে এরকম মানুষরূপী জানোয়ারদের দেখতে চাই না। এদের শুধু ফাঁসি নয়, আছিয়া যেমন অসহ্য কষ্ট পেয়েছে তেমনি নৃশংস এবং দৃষ্টান্তমূলকভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করা হোক ধর্ষকদেরও সেই দাবি জানাচ্ছি। ২৪’এর আন্দোলন কোন নিয়ম মেনে হয়নি তাই এদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা কোন নিয়মের অপেক্ষা করব না।(তামান্না আক্তার মিম, সিএসই বিভাগ)এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর