চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। দেশের সবচেয়ে বড় সমাবর্তনে গাউন-টুপি পরে খুশির ঝলকানিতে ভাসছে শিক্ষার্থীরা। কেউ বাবার হাত ধরে, কেউ মায়ের চোখে জল দেখে এই দিনে অর্জনের গর্ব যেন শতগুণ হয়ে ওঠে। কিন্তু এই উজ্জ্বলতার মধ্যেই নিঃশব্দে আলো ছড়াচ্ছেন আরও তিনজন। যারা আজ নেই, তবু গাউন পরে ফিরেছেন একটি দেয়ালের গ্রাফিতিতে।সমাবর্তনের ঠিক আগেই চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পাশের এক দেয়ালে আঁকা হয়েছে তিন তরুণের মুখ। গায়ে কালো গাউন, মাথায় টুপি, হাতে সনদ। মাঝখানে ইতিহাস বিভাগের শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, ডানে একই বিভাগের ফরহাদ হোসাইন এবং পাশে পরিসংখ্যান বিভাগের ফাহিম আহমেদ পলাশ। দেয়ালের এই দৃশ্য অনেককেই থমকে দিচ্ছে, মনে করিয়ে দিচ্ছে—সব অর্জন উদযাপন করতে পারে না সবাই, কেউ কেউ ইতিহাস হয়ে ওঠে।২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে প্রাণ হারান হৃদয় ও ফরহাদ। আন্দোলনের ফাঁকে, চোখে আগামীর স্বপ্ন নিয়ে তারা দাঁড়িয়েছিলেন অন্যায়ের বিপরীতে। আর একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর বন্যায় আটকে পড়াদের সাহায্য করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন ফাহিম আহমেদ পলাশ।যদি বেঁচে থাকতেন, হয়তো তারাও আজকের মতো গাউন-টুপি পরে হাসিমুখে ছবি তুলতেন বন্ধুদের সঙ্গে। হয়তো মা-বাবার হাত ধরে এই ক্যাম্পাসেই ঘুরে বেড়াতেন। কিন্তু ভাগ্য তাদের সে সুযোগ দেয়নি।সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ছবি তুলতে এসেছেন গ্রাফিতির সামনে। কেউ দাঁড়িয়ে থাকেন নীরবে। একজন বললেন, “এই সমাবর্তনে ফাহিমও থাকতে পারতো। হৃদয়-ফরহাদ আমাদের সাথেই হাসতো। তারা নেই, কিন্তু এই দেয়াল আমাদের চোখে আবার তাদের ফিরিয়ে এনেছে।”চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই তিন তরুণ এখন শুধুই নাম নয়, একটি সময়ের প্রতিচ্ছবি—যেখানে শিক্ষা, দায়িত্ববোধ আর প্রতিবাদের গল্প একাকার হয়ে গেছে। দেয়ালের গ্রাফিতিটা তাই কেবল শৈল্পিক নিদর্শন নয়, এটি স্মৃতির স্মারক, সাহসের দলিল। এমআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর