দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা তীব্র গরমে একটানা কাজ করতে পারছেন না। ফলে তাদের আয় দুই তৃতীয়াংশ কমে গেছে। পাশাপাশি বন্দরে ট্রাকে পণ্য লোড-আনলোডে দেখা দিয়েছে ধীর গতি।শ্রমিকরা বলছেন, একেতে বন্দরের কাজ কাম কম। তারপরে প্রচন্ড তাপদাহের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। আগে যেখানে প্রতিদিন ৭০০/৮০০ টাকা রোজগার হতো এখন সেখানে ৪০০/৫০০ টাকা রোজগার করতে হিমসিম খাচ্ছি। কোনদিন দেড়শ‘-২০০ টাকা হাতে নিয়েও বাড়ি ফিরতে হয়।যশোর মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, ক‘দিন ধরে যশোরে টানা তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। মঙ্গলবার বেলা ২টা ৩০ মিনিটে ৩৭ দশমিক ০৩, সোমবার ৩৯ দশমিক ০২, রোববার দুপুর ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল তাপমাত্রা। ফলে তীব্র তাপদহ চলছে অভিমত আবহাওয়া অফিসের। গত ৪-৫ দিন ধরে যশোরে গরমের তীব্রতা বেড়েই চলেছে।বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিক সর্দার আজগার আলি বলেন, গত সপ্তাহখানেক ধরে প্রচন্ড গরম। এই গরমে ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের বেশি একটানা কাজ করা যাচ্ছে না। গরমে দুপুরে কোনো কাজ করাই সম্ভব হচ্ছে না।সুমন হোসেন নামের এক শ্রমিক বলেন, অন্যান্য সময় সারাদিন কাজ করে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করতাম। এখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এক টানা কাজ করতে না পারায় আয় কমেছে।আরেক শ্রমিক খায়ের হোসেন বলেন, আগে ২০ জন শ্রমিক তিন ঘণ্টায় একটি ট্রাকের পণ্য আনলোড করতাম। এখন সময় লাগছে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। অনেকে গরমে কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।এই বন্দরের পণ্য বোঝাই করতে আসা একজন ট্রাক চালক অলিয়ার রহমান বলেন, গরমে শ্রমিকরা একটানা আগের মত কাজ করতে পারছে না। এতে সময় মত ট্রাক লোড হচ্ছে না। তাই আমাদেরও সময় অপচয় হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা বন্দরে বসে থাকতে হচ্ছে।বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৯২৫) লেবার সর্দার মুনছুর আলি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার বেশি গরম পড়েছে। শ্রমিকরা লাগাতার কাজ করতে পারছে না। পণ্য উঠানামায় (লোড-আনলোড) দেরি হচ্ছে, ব্যবসায়ীরাও বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু করার কিছু নেই।আরেক লেবার সর্দার আকতার হোসেন বলেন, বেলা ১১টার পর থেকে মনে হচ্ছে আগুনের ফুল্কি এসে শরীরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। এই গরম উপেক্ষা করেও শ্রমিকরা কাজ করছেন। তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাদের আয়ও কমে গেছে।রাজু আহম্মেদ বলেন, এক ট্রাক লোড দেওয়ার পর বিশ্রাম নিয়ে আবার আরেক ট্রাক লোড দিচ্ছেন। এতে প্রতিদিন যেখানে ২০ ট্রাক লোড হতো। বর্তমানে গরমের কারণে শ্রমিকেরা ৮ থেকে ১০ ট্রাক লোড দিতে পারছে।এদিকে বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের আরেক অংশের (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৮৯১) সভাপতি মাকসুদুর রহমান রিন্টু বলেন, বেশ কিছুদিন বৃষ্টির দেখা নেই, তাই প্রচন্ড তাপদাহে শ্রমিকরা কাজ এগিয়ে নিতে পারছে না। তীব্র গরমের কারণে হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা স্বস্তিতে কাজ করতে পারছে না।শ্রমিকরা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে এজন্য ইউনিয়ন অফিস থেকে খাবার পানি এবং স্যালাইন সরবরাহ করা আছে। ঠিকমত কাজ করতে না পারায় শ্রমিকদের আয় রোজগারও গত সপ্তাহ থেকে এ সপ্তাহে অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে ৭০০/৮০০ টাকা আয় হতো শ্রমিকদের। এখন সেখানে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হচ্ছে।যশোরের নাভারন ফজিলাতুননেছা সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক ইউনুচ আলি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে জেলায় শুরু হয়েছে তীব্র দাবদাহ। তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেছে। যা মানুষও প্রাণীদের জন্যে বিপদজনক। বৈরী পরিস্থিতিতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বাড়ছে যশোরের তাপমাত্রা। এতে বিপাকে পড়েছেন বন্দর শ্রমিকরা। খেটে খাওয়া এই মানুষগুলো বেলা ১১টার পর থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না। দুপুর থেকে আগুনের হলকা ছাড়ছে প্রকৃতি। এই অবস্থার মধ্যে হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা ট্রাকে পণ্য লোড আনলোডে হিমশিম খাচ্ছে। পণ্য সরবরাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।বন্দরে পণ্যজট কমাতে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান।প্রচন্ড গরমে শ্রমিকরা বন্দরে অনেক কষ্ট করে কাজ করছে। শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে তাদের জন্য বন্দরের ভিতরে আলাদা বিশ্রাম নেয়ার ঘর করা আছে। আছে খাবার পানির ব্যবস্থা। তারা কাজের ফাঁকে ফাঁকে সেখানে বিশ্রাম নিয়ে থাকে। এমআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর