বিতর্কিত রাজনীতি, ক্ষমতার দাপট, এলাকার নিয়ন্ত্রণ আর একের পর এক হামলার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. আজহার উদ্দীন। এবার সেই আলোচিত যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার কেরানীহাট স্টেশনে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে সাতকানিয়া থানা পুলিশ।গ্রেপ্তারকৃত আজহার উদ্দীন (৪৮) ছদাহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৌলানা ছগির শাহ পাড়ার মো. আবু তাহেরের ছেলে। একই ওয়ার্ড থেকে তিনি বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্বে রয়েছেন।আজহার উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় দীর্ঘদিনের। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে এলেও এতদিন ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সময় ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে সশস্ত্র হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলেই অভিযোগ রয়েছে। সেই মামলায়ই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম।আজহার উদ্দীন শুরু থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ছদাহা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০২২ সালে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকাজুড়ে তার দাপট চরমে পৌঁছায়। সেই সময় থেকেই শুরু হয় ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন, এবং অবৈধ অর্থের জোগান দিতে মাটির ব্যবসার মত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া।ছদাহা ইউনিয়নের একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আজহার একজন রাজনৈতিক গুন্ডায় পরিণত হয়েছিল। তার কথার বাইরে গেলে মার খেতে হতো, মিথ্যা মামলায় জড়াতো।”স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আজহার উদ্দীনের নেতৃত্বে একাধিকবার বিএনপি, জামায়াত ও এলডিপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি ঘেরাও, শারীরিক নিপীড়ন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি বিভিন্ন নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে ভোট জালিয়াতির ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছে তার।ছদাহার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি থেকে রাতের আঁধারে ট্রাকে ট্রাকে মাটি কেটে নেওয়ার ঘটনায় আজহারের নাম জড়িয়েছে বহুবার। কৃষকদের অভিযোগ, মাটি দিতে না চাইলে হুমকি দেওয়া হতো। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করে মাটি পরিবহনের অনুমতি ম্যানেজ করতেন বলেও জানা গেছে। তবে এসব অভিযোগ আজ পর্যন্ত কখনো তদন্তের মুখ দেখেনি।২০২৪ সালে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী বিস্তৃত হয়, তখন সাতকানিয়ার কেরানীহাটে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিল লক্ষ্য করে পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে, “প্রথমে লাঠিসোটা, পরে গুলিবর্ষণ। আজহার ও তার কর্মীরা তখন একেকজন হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।” সে সময় দায়েরকৃত মামলায় আজহার উদ্দীনকে অন্যতম আসামি করা হয়। দীর্ঘদিন পর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতে তাকে কেরানীহাট স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।ওসি মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, “আজহার উদ্দীনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলা ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার (১৩ মে) আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।”এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর