শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) মেতেছিল এক আনন্দময় উৎসবে “এগ্রিকার্নিভাল ১.০”। দিনভর নানা রঙের আর ঢঙে সেজেছিল সবুজ চত্বর, যেখানে শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে তৈরি হয়েছিল এক অসাধারণ মেলবন্ধন। রাতের আকাশে যখন তারারা মিটিমিটি জ্বলছিল, তখনও ক্যাম্পাসের ভবনগুলো ঝলমল করছিল বর্ণিল আলোয়, যেন উৎসবের রেশ তখনও কাটেনি।সকালের সূর্য উঁকি দেওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় এগ্রিকার্নিভালের মূল আকর্ষণগুলো। মাঠের সবুজ ঘাসে খেলোয়াড়দের পদচারণায় মুখরিত ছিল ইন্টার-লেভেল ফুটবল টুর্নামেন্ট। একদিকে যেমন ছিল তারুণ্যের উদ্দামতা, তেমনি অন্যদিকে মেয়েদের জন্য আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী গেম শো – মার্বেল দৌড় আর বালিশ খেলা – ফিরিয়ে এনেছিল গ্রামীণ খেলার স্মৃতি। এরপর ইন্টার-লেভেল ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচটি ছিল উত্তেজনা আর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরপুর, যেখানে দর্শকদের উল্লাসে মুখরিত ছিল চারপাশ।উৎসবের আমেজ আরও বাড়ে যখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টিএসসি বুথ থেকে নিজেদের টি-শার্ট সংগ্রহ করে নেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে অ্যাগ্রি অনুষদের ফ্যাকাল্টি ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড থেকে শুরু হয় এক বর্ণাঢ্য র্যালি। নানা রঙের প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুনে সজ্জিত এই র্যালি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে, যা উৎসবের বার্তা ছড়িয়ে দেয় সকলের মাঝে। দুপুরে আপ্যায়নের পর্ব শেষে সেন্ট্রাল ফিল্ডে আয়োজিত মানব এগ্রিকালচারাল ড্রোন শো ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। ড্রোন দিয়ে কৃষির বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয় আকাশে, যা দেখে মুগ্ধ হন আগত সকলে।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগে এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয় যখন এগ্রিকালচার ৮২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেয় নবীন এগ্রিকালচার ৮৩ ব্যাচকে। এই নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রবীণদের দিকনির্দেশনা আর নবীনদের তারুণ্যের উচ্ছ্বাস এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে।এরপর শুরু হয় অতিথিদের আগমন এবং টিএসসিতে তাদের আসন গ্রহণের পালা। বিশিষ্ট অতিথিদের মূল্যবান বক্তব্য শেষে মঞ্চে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, নাচ, আবৃত্তি আর নাটকের সমন্বয়ে পরিবেশিত এই অনুষ্ঠান দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। সন্ধ্যার বিরতির পর আবারও শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব, যা গভীর রাত পর্যন্ত চলে। তারুণ্যের জয়গান আর শিল্পকলার মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় শেষ হয় এগ্রিকার্নিভাল ১.০ এর বর্ণিল আয়োজন।এই উৎসব শুধু একটি অনুষ্ঠান ছিল না, এটি ছিল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেকার ভালোবাসার বন্ধন, তারুণ্যের উদ্দীপনা আর শেকৃবির ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। আলোকসজ্জায় ঝলমল করা ক্যাম্পাস আর সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এগ্রিকার্নিভাল ১.০ সত্যিই এক অসাধারণ স্মৃতি হয়ে থাকবে সকলের হৃদয়ে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর