যশোরের চুড়ামনকাটি-চৌগাছা সড়ক যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। এতে অনেক পরিবার সর্বশান্ত হচ্ছেন। গত ১০ দিনে তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ তিনজন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছেন।নিহতরা হলেন, যশোর পুলিশ লাইন টালিখোলা এলাকার রাজু হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রিতু খাতুন (২০), চৌগাছা পৌর এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে সেলিম রেজা রচি (৫৫) ও সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের কোরবান আলী সরদারের ছেলে উজ্জল হোসেন (২৮)।স্থানীয়রা বলছেন, বেপরোয়া যান চলাচলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে। প্রশাসনের দাবি, মানুষের অসচেতনতায় সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানা যাচ্ছে না। জানা গেছে, শুক্রবার (৯ মে) রাত ৮ টার দিকে স্বামী রাজুর মোটরসাইকেল চড়ে বাবা আখতার হোসেনের বাড়ি চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের জগহাটি গ্রামে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে চৌগাছা সড়কের চুড়ামনকাটির দোগাছিয়া এলাকায় পৌঁছালে সামনে থেকে আসা গরু বোঝাই নসিমনের সাথে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এ সময় সড়কের পাশে পড়ে ছিটকে পড়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান রিতু। দুর্ঘটনায় তার স্বামী রাজু আহত হন। নিহত রিতুর পিতা জানান, কয়েক মাস আগে তার মেয়েটার বিয়ে হয়েছে। তার বাড়িতে বেড়াতে আসার পথেই মেয়েটার মৃত্যু হলো। কেঁদে ওঠেন তিনি। গত ৩ মে (শনিবার) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে চৌগাছা সড়কের সদর উপজেলার জগহাটির রুলপাড়ায় সিএনজি-ট্রলির সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে মারা যান সেলিম রেজা রচি (৫৫)। তিনি সিএনজির যাত্রী ছিলেন৷ এ দুর্ঘটনায় ৩ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের একজন গুরুতর অবস্থায় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে গত ৩০ মে (সোমবার) রাত ৮ টার দিকে চুড়ামনকাটির দোগাছিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় চুড়ামনকাটি বাজারের জুতা ব্যবসায়ী উজ্জলসহ তিনজন আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য উজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। উজ্জলের মৃত্যুর পর তার পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এমনিতেই চুড়ামনকাটি-চৌগাছা সড়কটি ব্যস্ততম সড়ক হিসেবে পরিচিত। আমবটতলায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এই সড়কে আরও ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি সড়কটিতে বাস, ট্রাক, নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, মোটরচালিত ভ্যান, সিএনজিসহ নানা ধরণের যানবাহন চলাচল করে। কিছু যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে সড়কটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। প্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় তাজা প্রাণ নিভে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারীরা চলাচল করছেন। দোগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক হেদায়েত খান ও মিজানুর রহমান জানান, চালকদের সাবধানতা ও বিচক্ষণতার সাথে গাড়ি চালাতে হবে। অন্যথায় দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে। একের পর এক মানুষ প্রাণ হারাবে। মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চলাচল মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়ায়। এসব চালকদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসনের কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের আহবান করেছেন তারা। এই বিষয়ে চুড়ামনকাটির সাজিয়ালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আব্দুর রউফ জানান, চৌগাছা সড়কে পথচারীদের বড় আতঙ্ক হলো সিএনজি ও মোটরসাইকেল। চালকদের বেপরোয়া চলাচলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না৷ এসব বিষয়ে চালক ও পথচারীদের সচেতন করা হচ্ছে। যশোর ট্রাফিক পুলিশের ইনস্পেক্টর (টিআই) মাহফুজুর রহমান জানান, চৌগাছা সড়কে সিএনজি,ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলের চালকদের বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনা বেড়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে চেকপোস্ট বসানো হবে। নিবন্ধনবিহীন মোটরসাইকেল আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর