কিশোরী বয়সে একটি জাদুঘরে গিয়ে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন শিবাঙ্গী সিংহ। সেই স্বপ্ন এখন অনেকটাই বাস্তব। রাফাল যুদ্ধবিমানে ভারতের প্রথম নারী পাইলট হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছেন তিনি। আকাশ জয়ের পর এবার তাঁর লক্ষ্য আরও উচ্চতর—মহাকাশে পাড়ি দেওয়া।উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে জন্ম শিবাঙ্গীর। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন পড়াশোনায় মেধাবী, খেলাধুলাতেও পারদর্শী। স্কুলজীবন শেষে তিনি ভর্তি হন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজের উচ্চশিক্ষায় দাঁড়ি টানার পর ২০১৬ সালে বায়ুসেনার অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন শিবাঙ্গী। প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সাল থেকে ভারতীয় বায়ুসেনায় নারীদের নিয়োগ শুরু হলেও যুদ্ধবিমান চালানোর অনুমতি মেলে ২০১৫ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় শিবাঙ্গীর মতো অনেকেই ভারতের আকাশে যুদ্ধবিমান চালানোর সুযোগ পান। ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রথম ব্যাচের মহিলা ফাইটার পাইলট হিসাবে তাঁরা সকলেই ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দিয়েছিলেন।প্রথমে মিগ-২১ বাইসন চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন শিবাঙ্গী। রাজস্থানের একটি ফাইটার বেসে তিনি উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের সঙ্গে বিমান চালিয়েছেন। ২০১৯ সালে বালাকোট বিমান হামলার পর একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামিয়েছিল পাক সেনা। তখন পাক সেনার হাতে বেশ কিছু দিন বন্দি ছিলেন অভিনন্দন বর্তমান।শিবাঙ্গী যখন প্রথম বার মিগ-২১ যুদ্ধবিমান উড়িয়েছিলেন তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, একটি যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণের জন্য কী পরিমাণ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যে, একা বিমান চালানোর সময় ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্মৃতি মনে পড়লে তাঁর মন আনন্দে ভরে যায়।এক যুদ্ধবিমান ছেড়ে অন্য যুদ্ধবিমান চালানোর জন্য নিতে হয় ‘কনভারসন ট্রেনিং’। শিবাঙ্গী যে হেতু রাফাল চালানোর আগে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান চালাতেন, তাই তাঁকে এই প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল।কঠোর প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর অম্বালা বিমানঘাঁটিতে ‘গোল্ডেন অ্যারোজ’ স্কোয়াড্রনে যোগ দিয়েছিলেন শিবাঙ্গী। সেই সময় ভারতীয় বায়ুসেনায় মোট ১০ জন মহিলা ফাইটার পাইলট ছিলেন। কিন্তু শিবাঙ্গী তাঁদের মধ্যে প্রথম যিনি রাফাল যুদ্ধবিমান ওড়ানোর দায়িত্ব পান।২০২০ সালে ভারতীয় বায়ুসেনার কঠিন নির্বাচনী ধাপ পেরিয়ে শিবাঙ্গী ফরাসি প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে বিশেষ সিমুলেটর প্রশিক্ষণ নেন। ২০২২ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে বিমানবাহিনীর ট্যাবলোর অংশও ছিলেন তিনি।এক সহকর্মী ফাইটার পাইলটকে বিয়ে করেছেন শিবাঙ্গী। বর্তমানে তিনি ভারতের ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরইমধ্যে তিনি টেস্ট পাইলট প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন।এক সাক্ষাৎকারে শিবাঙ্গী এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আমার মতো বহু মহিলা ফাইটার পাইলট হয়েছেন। এতে যে শুধু আমাদের সমাজের অগ্রগতি ফুটে উঠেছে তা-ই নয়, মহিলারাও যে তাঁদের স্বপ্নপূরণ করতে পারেন সেই বার্তাও দিয়েছে।ছোটবেলায় বারাণসী থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন শিবাঙ্গী। নয়াদিল্লিতে বিমানবাহিনীর জাদুঘরে ঘুরছিলেন তিনি। চোখের সামনে এত বিমান এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীর ইতিহাস জানতে পেরে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি।শিবাঙ্গী এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর জীবনে অনুপ্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস তাঁর মা। শিবাঙ্গী বলেছিলেন, মা কেবল আমায় শিক্ষিত করতে চায়নি। মা চেয়েছিল আমি যেন নিজের পায়ে দাঁড়াই, স্বাবলম্বী হই। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমাকে সমর্থন করেছে মা।’ সূত্র: আনন্দবাজারএসকে/আরআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর