ভারত ৭ মে ভোরে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ভারত দাবি করেছে, তারা সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে মাপা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা চালিয়েছে। তবে পাকিস্তান বলছে, এসব হামলার লক্ষ্য ছিল বেসামরিক এলাকা — যার মধ্যে মসজিদ ও আবাসিক ভবনও ছিল। এই হামলায় অন্তত ৮ জন পাকিস্তানি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩৫ জন।ভারতের হামলার পটভূমিতে রয়েছে গত মাসে ভারতের অধিকৃত কাশ্মীরের পর্যটন শহর পাহেলগামে ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে হত্যার ঘটনা। ভারত এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা সরাসরি অস্বীকার করেছে এবং উল্টো একটি স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছে।কেন অঞ্চলটি এত উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু?১. ঐতিহাসিক বিভক্তি ও অধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগের সময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তার হিন্দু শাসক স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে ভারতের অংশ হন। এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত থেকেই শুরু হয় দীর্ঘ দ্বন্দ্ব।২. ভৌগোলিক ও জনমিতিক বাস্তবতাকাশ্মীর বর্তমানে তিন ভাগে বিভক্ত — ভারত শাসিত (জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ), পাকিস্তান শাসিত (আজাদ কাশ্মীর ও উত্তরাঞ্চল), এবং চীন নিয়ন্ত্রিত আকসাই চিন। জম্মু ও কাশ্মীর -এর জনসংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ, যার ৭০ শতাংশ মুসলমান।৩. সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদভারতীয় সংবিধানে সংযোজিত ৩৭০ অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে আংশিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেয়। এটি ২০১৯ সালে বাতিল করে মোদি সরকার। এর মাধ্যমে কাশ্মীরের নিজস্ব পতাকা, সংবিধান ও আইনি স্বকীয়তা বিলুপ্ত হয়।৪. যুদ্ধ ও সামরিক উত্তেজনাভারত ও পাকিস্তান তিনটি যুদ্ধ করেছে, যার মধ্যে ১৯৪৭ ও ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ ছিল কাশ্মীরকেন্দ্রিক। ১৯৯৯ সালে কারগিলেও সামরিক সংঘর্ষ হয়। বর্তমানে সীমান্তে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি রেখা ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ (LoC) অঞ্চলকে ভাগ করে রেখেছে।৫. স্বাধীনতার দাবিতে গণআন্দোলন১৯৮৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর-এ স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী ব্যাপক হস্তক্ষেপ শুরু করে এবং সহিংসতায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত হন। ভারত পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসী লালন’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে, যা ইসলামাবাদ অস্বীকার করে।৬. ২০১৯ সালের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারমোদি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে: জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। পাকিস্তান এ সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ জানায় ও কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করে।৭. সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও ২০২৪ সালের নির্বাচনভারতের দাবি, ২০১৯ সালের পর সহিংসতা কমেছে ও পর্যটন বেড়েছে। তবে টার্গেট কিলিং, বিক্ষোভ ও নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার ঘটনা এখনো ঘটছে। ২০২৪ সালে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও অনেকে একে প্রহসন বলে অভিহিত করেন এবং আংশিকভাবে ৩৭০ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন।এসকে/আরআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর