মাদারীপুরে শিরক আখ্যা দিয়ে শতবর্ষী একটি বটগাছ কেটে ফেলার হয়েছে। গাছটির ডাল-পালা থেকে শুরু করে বেশিরভাগ অংশ কাটা শেষ হয়ে গেছে। এখনো চলছে বটগাছটির শিকড় ও গোড়া কাটার প্রস্তুতি।সোমবার (০৬ মে) সকাল থেকে সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলমমীরের কান্দি এলাকার কুমার নদের পাড়ে গাছটি কাটা শুরু করেন স্থানীয় মুসল্লী ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, বটগাছে গোড়ায় নারীরা শিন্নি ও মিষ্টি দেয় আবার অনেকে লাল কাপড় প্যাচিয়ে দেয়। অনেকে বটগাছকে দেবতা মনে করে পূজা করেন। এসব শিরক। যা ইসলামে সম্পূন্ন নিষিদ্ধ। তাই গাছটি কেটে ফেলা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। শিরক হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে নির্ধারিত করা বা তার উপাসনা করা।উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলমমীরের কান্দি এলাকার কুমার নদের পাড়ে সত্তার হাওলাদারের মালিকানাধীন জমিতে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠে শতবর্ষী বটগাছটি। এই বাটগাছ ঘিরে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস ও এক ধরণের কৌতুহল রয়েছে। স্থানীয় অনেকেই বটগাছের নিচে ছায়া নিবারণ ও অবসর সময়ও কাটাত।স্থানীয়দের ভাষ্য, এই বটগাছের নিচে অনেকেই মোমবাতি ও আগরাবাতি জ্বালিয়ে পূজা করে বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে আরোগ্যের প্রত্যাশা রাখে। সাধারণ মানুষ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে মানত করেন এখানে। বিশেষ করে সনাতন ধর্মালম্বীরা বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে বটগাছটিতে ফুল দিয়ে পূজা করে। তাদের বিশ্বাস, গাছটির ভেতর একটি বড় সাপ থাকে। অমাবস্যা পূর্ণিমার রাতে সে বের হয়। এরপর ঘুরে-ফিরে ভোর হওয়ার আগে আবারও বটগাছের ভেতরে ফিরে যায়। তবে এ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কোনও ঘটনা নেই।জেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বটগাছ একটি সংরক্ষিত প্রজাতি। তা কাটার প্রশ্নই ওঠে না। এর ফল খেয়ে অনেক প্রজাতির পাখিরা বেঁচে থাকে। এলাকার শতবর্ষী বৃক্ষগুলোকে চিহ্নিত করে এদের সংরক্ষণের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যাগ গ্রহণ করবো।জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘বটগাছটি কাটার বিষয় আমরা জেনেছি। গাছটির গোড়া এখনো আছে। জীবন্তও আছে। জেলার বন কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ আমাদের অনেকেই ওই স্থানে গিয়ে গাছকাটা বন্ধ করেছেন। তারা আমাকে জানিয়েছে, স্থানীয় জনতা গাছটি কাটার চেষ্টা করেছেন। যারা কাটার উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদের আমরা ডেকেছি। কারণ জানতে চেয়েছি। তারা বুঝতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন। যারা এ ধরণের অন্যায় কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর