গাজীপুরে মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিন কাদেরীর মৃত্যুর প্রতিবাদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত ও ইসলামী ছাত্রসেনা ঘোষিত সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মুরাদপুরে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০ জনকে আটক করা হয়।সোমবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, একে খান, সল্টগোলা ক্রসিং ও অক্সিজেন মোড়ে একযোগে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেয় শতাধিক ব্যক্তি। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মুরাদপুর মোড়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।চোখেমুখে গ্লানি ও ক্ষোভ নিয়ে মাসুদ আহমেদ নামের একজন অবরোধকারী সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, “আগে ছাত্রলীগ ছিল, এখন তারা নেই—কিন্তু ভূমিকা একই রয়ে গেছে। পুলিশ ছিল হাতের পুতুল, এখনও পুতুলই আছে। আমাদের একজন আলেমকে হত্যা করা হলো—এক সপ্তাহ কেটে গেলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, অথচ অন্য ঘটনায় হাত ছিঁড়ে গেলে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার!”পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় অবরোধকারীরা এলোমেলোভাবে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে পুলিশের অভিযানে অন্তত ১০ জনকে আটক করা হয়।পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, “সকাল ৯টা থেকে প্রায় ১০০-২০০ লোক সড়ক অবরোধ করেন। তাদের সরিয়ে দিতে বারবার অনুরোধ করা হলেও তারা মানেনি। একপর্যায়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হই।” তিনি আরও বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। জনদুর্ভোগ রোধে পুলিশ মাঠে রয়েছে।”সরেজমিনে দেখা যায়, মুরাদপুরে সংঘর্ষের সময় ‘স্থানীয়’ পরিচয়ে কিছু যুবক লাঠিসোঁটা হাতে রাস্তায় নেমে আসেন। তারা অবরোধকারীদের ধাওয়া দেন এবং অনেকের মোবাইল ফোন কেড়ে নিতেও দেখা গেছে।অন্যদিকে, নগরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় সকাল ১০টার দিকে শান্তিপূর্ণভাবে রেলপথ সংলগ্ন সড়কে অবরোধ করে শতাধিক ব্যক্তি। তবে সেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। নগর পুলিশের বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হক বলেন, “প্রায় ৫০-৬০ জন মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেন। আমাদের অনুরোধে তারা ফিরে যান। গ্রেপ্তারের কোনো ঘটনা ঘটেনি।”মাওলানা রইস উদ্দিন কাদেরী গত ২৭ এপ্রিল গাজীপুরের হায়দারাবাদ এলাকার একটি মসজিদের খতিব ছিলেন। শিশু বলাৎকারের অভিযোগে স্থানীয়দের হাতে আটক হয়ে মারধরের শিকার হন তিনি। পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২৮ এপ্রিল ভোরে গাজীপুর কারাগারে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের নেতারা দাবি করেছেন, “এই মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।” এক অবরোধকারী বলেন, “একজন আলেমের মৃত্যু হলেও বিচার হচ্ছে না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ন্যায্য বিচার চাই।”সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সড়ক অবরোধ জনগণকে দুর্ভোগে ফেলার উদ্দেশ্যে নয়, বরং রইস উদ্দিনের মৃত্যুর দায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চাওয়ার অংশ হিসেবেই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর