রাজশাহী কর অঞ্চল ২০২৪-২৫ করবর্ষে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের দিক থেকে রেকর্ড গড়েছে। এ বছর এক লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন, যা এ অঞ্চলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এতো বড় পরিসরের সাড়া। কর অঞ্চল রাজশাহীর কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি শুধু একটি সংখ্যাগত অগ্রগতি নয়—বরং এটি করদাতা সচেতনতা, প্রযুক্তি-ব্যবহার, ও করবান্ধব পরিবেশ তৈরির একটি বাস্তব উদাহরণ।২০২৩-২৪ করবর্ষে রাজশাহী কর অঞ্চলে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছিলেন মাত্র ৩৬,৭০৮ জন করদাতা। এক বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ছাড়িয়ে। অর্থাৎ প্রায় ৫৩ হাজারেরও বেশি করদাতা প্রথমবারের মতো অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন। এমন প্রবৃদ্ধি কর অঞ্চলগুলোর মধ্যে বিরল, যা রাজশাহী অঞ্চলের সফল প্রচারণা ও উদ্যোগেরই প্রতিফলন।এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাজশাহী কর অঞ্চলের কমিশনার মোঃ আবু সাঈদ সোহেলের নেতৃত্ব। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে উদ্বুদ্ধ করতে নানা কার্যক্রম হাতে নেন।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ছাড়াও পাবনা, নাটোর, নওগাঁ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে আয়োজিত হয়েছে শতাধিক সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এসব আয়োজনে অংশ নেন করদাতা, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, এবং আয়কর আইনজীবীরা।কমিশনার বলেন, “আমরা করদাতাদের বলেছি—অফিসে এসে হয়রানি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করুন, আমরা সিস্টেম প্রস্তুত রেখেছি। এই মেসেজটাই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে।”রাজশাহী কর অঞ্চলে কর অফিসগুলোতে ই-ফাইলিং বুথ, সহায়তা ডেস্ক এবং আইটি সহায়তাকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। করদাতারা সরাসরি গিয়ে রিটার্ন দাখিলের সহায়তা পেয়েছেন, কেউ কেউ হোয়াটসঅ্যাপ বা ই-মেইল মাধ্যমেও তথ্য পেয়ে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন।অনেক তরুণ শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী জানান, আগে তারা মনে করতেন আয়কর রিটার্ন মানেই জটিল ফর্ম, হিসাব ও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো। কিন্তু এবার কর অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণে রিটার্ন দাখিল করতে পেরেছেন মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজশাহীর এই অগ্রগতি শুধু পরিসংখ্যানগত নয়—এটি দেশের কর ব্যবস্থায় একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী এখন কর প্রদানে আগ্রহী, সচেতন ও প্রযুক্তিনির্ভর। অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে করদাতারা স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন।রাজশাহী আয়কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক বলেন, “অনলাইনে রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়াটি সহজ করা গেলে, মানুষ কর দিতেই আগ্রহী হয়। রাজশাহীর সফলতা সেটিই প্রমাণ করে।”২০২৪-২৫ করবর্ষে সারাদেশে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন প্রায় ২০ লাখ করদাতা। এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চল এককভাবে অবদান রেখেছে এক লাখেরও বেশি রিটার্ন দিয়ে। এটি জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, “রাজশাহীর মডেলকে আমরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও অনুসরণ করার চিন্তা করছি। কমিশনার সোহেলের নেতৃত্বে এই অঞ্চল ডিজিটাল কর ব্যবস্থায় যে সফলতা পেয়েছে, তা প্রশংসনীয়।”এই ঐতিহাসিক অর্জনের জন্য কর অঞ্চল রাজশাহীর কমিশনার মোঃ আবু সাঈদ সোহেল করদাতা, ব্যবসায়ী, আয়কর আইনজীবী ও কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই, ভবিষ্যতে ঘরে বসেই যেন দেশের প্রতিটি নাগরিক নিজে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। গ্লোবালাইজেশনের যুগে কর অফিসে আসার প্রয়োজন নেই। রিটার্ন যেন হয় হাতের মুঠোয়—এটাই আমাদের লক্ষ্য।”রাজশাহী কর অঞ্চল ইতোমধ্যেই পরবর্তী করবর্ষের জন্য করদাতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও অনলাইন সহায়তা পোর্টাল চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মাধ্যমে আরও বেশি মানুষকে কর নেটওয়ার্কে আনা এবং অনলাইন রিটার্ন ব্যবস্থাকে বিস্তৃত করা হবে।কমিশনার জানান, “আমাদের লক্ষ্য শুধু রিটার্ন সংখ্যা বাড়ানো নয়, বরং করদাতাদের আস্থা অর্জন করা। করদাতা যেন মনে করেন, এটা দায়িত্বের পাশাপাশি গর্বের বিষয়।”রাজশাহী কর অঞ্চলের এই ব্যতিক্রমী সফলতা দেশের রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যদি অন্যান্য কর অঞ্চলসমূহও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে, তবে ভবিষ্যতে কর আদায়ের পরিধি যেমন বাড়বে, তেমনি জনগণের কর প্রদানে আগ্রহ ও আস্থা আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর