চিকিৎসক সংকট সহ নানান অজুহাতে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটের অজুহাতে বন্ধ রয়েছে অপারেশন থিয়েটার। যার ফলে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ওটি রুমের কোটি টাকার সরঞ্জাম। সরকারি হাসপাতালে সেবা না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। তাদের খরচও বাড়ছে কয়েকগুণ। গ্রামীন জনপদে স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দেওয়ার লক্ষে ১৯৬৩ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মান করা হয়। রোগীদের চাহিদা বিবেচনায় ২০০৬ সালে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করে নতুন ভবনে ২০১৭ সালে রুগীদের সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে বিভিন্ন পদে জনবল সংকট থাকার কারনে ৪ লক্ষাধিক মানুষের সেবায় দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক্সরে মেশিন, অপারেশন থিয়েটার সহ সবই আছে শুধু প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাব।উপজেলা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সূত্র জানায়, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট পদ রয়েছে ১০৭ টি। যার মধ্যে কর্মরত রয়েছে ৬৫ জন আর শূন্য রয়েছে ৪২ জনের পদ। ২১ জনের চিকিৎসক পদে কর্মরত রয়েছে ৮ জন, শূন্য রয়েছে রয়েছে ১৩ টি চিকিৎসকের পদ। এছাড়াও যে সকল গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো রয়েছে তার অধিকাংশ গুলোতেই শূন্য পদের সংখ্যা বেশি রয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ঠিকমতো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। নানান অজুহাতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান দেওয়া উচিত। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সেলিম রেজা বলেন, সরকারি হাসপাতালে আমরা কম খরচে অপারেশন করাতে পারব এমনই হওয়া উচিত কিন্তু তা আর হয়না। অপারেশন দীর্ঘদিন বন্ধ আছে। আমরা অল্প খরচে চিকিৎসা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এই সরকারি হাসপাতালের অনেক ডাক্তারই বাইরে অপারেশন করছে ক্লিনিক গুলোতে কিন্তু এখানে অপারেশন সেবা বন্ধ রয়েছে নানান অজুহাতে। সোনিয়া আক্তার বলেন, আমি ডেলিভারি অপারেশন হওয়ার জন্য এর আগে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তার না থাকার কারণে অপারেশন হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয় ক্লিনিকে অপারেশন করাতে হয়। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যায়। তাই দ্রুত অপারেশনের ডাক্তার প্রয়োজন। সদর হাসপাতালে অপারেশনের ডাক্তার খুব গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ারুল ইসলাম নামের একজন বলেন, কিছুদিন আগে আমার হাত ভেঙ্গে গেলে আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়। তারা অন্য ক্লিনিক থেকে এক্সরে করিয়ে আনতে বলে। যদি হাসপাতালে এক্সরে মেশিনটা চালু থাকতো তাহলে আমার অল্প খরচে হয়ে যেত কারণ বাইরে অনেক অনেক খরচ বেড়ে যায়। আর হাসপাতালে অতি দ্রুত অপারেশনের ডাক্তার প্রয়োজন না হলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুপ্রভা রানী বলেন, এনেস্থিসিয়া ও সার্জারি ডাক্তার না থাকার কারণে দীর্ঘদিন অপারেশন হচ্ছে না। এনেস্থিসিয়া, সার্জারি ডাক্তার সহ যেসকল সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান হলে আমরা অতি দ্রুত অপারেশন শুরু করতে পারবো। আমার এখানে যোগদান করা প্রায় তিন বছর হচ্ছে। এই তিন বছরে মাত্র একটি সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে গত বছরের অক্টোবর মাসে। আর এক্সরে মেশিন যিনি চালাতেন তিনি গত ফেব্রুয়ারি ২০ তারিখে অবসরে গেছেন। তারপর থেকেই এক্সরে বন্ধ আছে। আশা করছি অতি দ্রুত সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্য কোনো সমস্যা নেই।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর