জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন ও বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর, সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা দশানী নদী। এ নদীতে বাহাদুরাবাদ ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নে পাল্টাপাল্টি কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ করেছে স্থানীয়রা। এই বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গিয়ে দেখো দিয়েছে কৃত্রিম বন্যা। যার প্রভাবে দশানী নদীসহ উত্তরের জিঞ্জিরাম নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে নদীর পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ফসলের আবাদ।জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের খাপড়াপাড়ায় দশানী নদীতে প্রতিবছর ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙন রোধে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি জানিয়ে এলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এবার এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে উক্ত খাপড়াপাড়া এলাকায় সম্প্রতি নদীতে আড়াআড়িভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করে। ওই বাঁধের ফলে নদীর পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী, শেখপাড়া, খানপাড়া, বাঙালপাড়া, মদনেরচর, নীলেরচর, কুতুবেরচর, চরগাজিরপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চর আইরমারী গ্রামের বাসিন্দারাও নদীতে আরেকটি পাল্টা বাঁধ নির্মাণ করে। পাল্টাপাল্টি দুটি বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে উজানের পানি ভাটিতে আসার পরিবর্তে উল্টো ভাটির পানি উজানের দিকে বয়ে যাচ্ছে। এতে উজানে দেখা দিয়েছে কৃত্রিম বন্যা। বন্যায় তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি। স্থানীয় কৃষকরা পানির নিচ থেকে ধান কেটে নিচ্ছে। আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পরেই কৃষকরা তাদের কষ্টে উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার আশা বুনেছিল। কিন্তু অপরিকল্পিত এই বাঁধ দেওয়ায় তাদের সে আশা ভন্ডুল হতে চলছে। কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। সরেজমিন দেখা গেছে, দেওয়ানগঞ্জের চর আমখাওয়া, হাতিভাঙা ও বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের জিঞ্জিরাম নদী সংলগ্ন ধানের ক্ষেতে বন্যার পানি ঢুকেছে। কোন ক্ষেতের ধান প্রায় পেকেছে আবার কোন ক্ষেতে কেবল ধানের শীষ বের হয়েছে। এমতাবস্থায় জমিতে বন্যার পানি দেখে ভুক্তভোগী কৃষকরা দিশেহারা। অত্র অঞ্চলের প্রধান ফসল হলো বোরো ধানের আবাদ। এ আবাদের মাধ্যমে নিজেদের খোরাক ও ধানের খড় গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় সারাবছর। নিরুপায় হয়ে কেউ গো-খাদ্যের জন্য কাঁচা ধানই কেটে বাড়িতে নিয়ে যায়। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খাঁন বলেন, বাঁধ নির্মাণকারী দু’পক্ষের সঙ্গে আলাপ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেখানকার পরিবেশ অনেকটাই উত্তপ্ত। জামালপুর জেলা প্রশাসক তাদের সাথে কথা বলেছেন। এরপরেও যদি তারা বাঁধ নিরসনে সম্মত না হয় তখন আইনী প্রকিয়ায় যেতে হবে। এইচএ
Source: সময়ের কন্ঠস্বর