আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আয়োজিত র্যালি ও সমাবেশে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। সমাবেশে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মো. ইছহাক বলেন, ‘শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে এখনই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামা প্রয়োজন।’ বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল ১০টায় সাতকানিয়া রাস্তার মাথা মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হওয়া র্যালিটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেরানীহাট মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে আশেপাশের এলাকা থেকে আসা সহস্রাধিক শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। ব্যানার-প্ল্যাকার্ডে শ্রমিক অধিকার, মজুরি বৃদ্ধি এবং কলকারখানা চালুর দাবি তুলে ধরা হয়। সমাবেশে কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মো. ইছহাক বলেন, ‘আজও শ্রমিক শ্রেণি শোষণ-নিপীড়নের শিকার। কলকারখানা বন্ধ, অস্থির বাজার, মজুরির বেহাল অবস্থা ও শিশু শ্রম—সবই আমাদের শ্রমজীবী জনগণের নিত্যদিনের সমস্যা।’ তিনি ৯ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, সরকার যদি প্রকৃত শ্রমবান্ধব হয়, তবে এই দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। ঘোষিত ৯ দফা দাবি: ১. বন্ধ কলকারখানা চালু করা: দেশের হাজারো কলকারখানা বন্ধ থাকায় লাখ লাখ শ্রমিক বেকার। এগুলো পুনরায় চালু করলে জাতীয় উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি শ্রমজীবীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। ২. জাতীয়ভাবে মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন: বিভিন্ন সেক্টরে ভিন্ন ভিন্ন মজুরি কাঠামো থাকায় শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। আই জাতীয়ভাবে মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। ৩. গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে বর্তমান মজুরি অপ্রতুল। ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ না হলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনমান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ৪. পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধ করা: প্রতিনিয়ত পরিবহন শ্রমিকরা পুলিশের হয়রানি ও চাঁদাবাজদের নিপীড়নের শিকার। এ অবস্থার অবসান না হলে সেক্টরটি ধ্বংসের মুখে পড়বে। ৫. পরিবহন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা: দক্ষতা না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ৬. কৃষি উপকরণের মূল্য কমানো: সার, বীজ, কীটনাশক—এসবের মূল্য বৃদ্ধি কৃষকদের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। এ অবস্থায় কৃষিশ্রমিকেরাও বিপাকে পড়েছে। ৭. শিশু শ্রম বন্ধ করা: শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করা হচ্ছে। সরকার ও মালিকপক্ষকে একযোগে শিশু শ্রম বন্ধে কাজ করতে হবে। ৮. শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা: শ্রমিক পরিবারের সন্তানরা যেন সহজে শিক্ষা লাভ করতে পারে, তার জন্য বিনামূল্যে বই ও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ৯. প্রস্তাবিত শ্রম সংস্কার আইন বাস্তবায়ন: দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তাবিত শ্রম আইন ঝুলে আছে। এটি বাস্তবায়ন হলে শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্ব কমবে এবং শ্রমজীবীদের অধিকার নিশ্চিত হবে। সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, সাতকানিয়া শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উপদেষ্টা মুহাম্মদ তারেক হোছাঈন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি রফিক বশরী, সাতকানিয়া শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ডা.মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সাতকানিয়া শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি দিদারুল ইসলাম, খানে আলম, সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন, সাঙ্গু থানা শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইউনূস, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম, অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইলিয়াস, নুর মোহাম্মদ, নুরুল আলম ও মঞ্জুর আলম। এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর