বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কুখ্যাত মাদক করিডোর ঘুমধুমে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইয়াবা সিন্ডিকেট। এই চক্রের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ও আলোচিত গডফাদার মো. ইলিয়াস বর্তমানে গা ঢাকা দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক অভিযান এবং কক্সবাজারের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক মেহেদী’তে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই জনসম্মুখ থেকে অন্তরালে চলে গেছেন তিনি। তবে প্রশ্ন উঠেছে- ইলিয়াস কি সত্যিই পলাতক, নাকি কোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিরাপদে আড়ালে অবস্থান করছেন? স্থানীয়দের মনে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।অভিযোগ উঠেছে, ইলিয়াস শুধু সীমান্তপথে ইয়াবা পাচারের একমাত্র কুশীলব নন, বরং তিনি দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ‘৮ সিস্টার সিন্ডিকেট’-এর ঘূর্ণিবর্তে অবস্থান করছেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাদক ঢুকছে দেশে, যার পেছনে রয়েছে শক্তিশালী অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা।বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি মাদকচক্রের অপতৎপরতা ফাঁস হওয়ায় নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান ইলিয়াস। তবে তাকে রক্ষা করতে মাঠে নেমেছে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানান, “ইলিয়াসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কারণ তাকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছে স্থানীয় নেতাদের একটি চক্র।”স্থানীয়দের অভিযোগ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, দুই নেতার নাম- সাইফুদ্দিন বাহাদুর ও মুজিবুর রহমান। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইলিয়াসের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে ইটভাটার ব্যবসায় সম্পৃক্ত এবং তাকে গ্রেপ্তার এড়াতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছেন।বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নেতারা প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে শক্তিশালী প্রভাব খাটিয়ে ইলিয়াসকে গা ঢাকা দিতে সাহায্য করছেন। বিভিন্ন সময়ে তারা প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে ‘মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ এর বুলি আওড়ালেও, আড়ালে তাদের আশ্রয়ে চলছে সীমান্তজুড়ে ভয়ংকর অপরাধ সাম্রাজ্য।স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা বলছেন, এসব তথ্য ও অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে প্রচারিত হলেও এখনো পর্যন্ত এই নেতাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি দল। এমনকি ইলিয়াসের গ্রেপ্তারে বড় কোনো অভিযানও চোখে পড়ছে না। ফলে উঠেছে প্রশ্ন- ইলিয়াসকে আড়াল করার এই নাটকের নেপথ্যে আরও বড় কোনো গডফাদার কি রয়েছেন?ঘুমধুম, টেকনাফ ও উখিয়ার সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, “ইলিয়াসদের মতো চিহ্নিত মাদক গডফাদাররা যদি রাজনীতির ছত্রছায়ায় পালিয়ে থাকতে পারে, তাহলে মাদক নির্মূলের প্রতিশ্রুতি কেবলই নাটক।”এই অবস্থায় জনগণের দাবি- ইলিয়াসকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক এবং যেসব রাজনৈতিক নেতা তাকে সেল্টার দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।জানা গেছে, ইলিয়াস পরিচিত ‘ইয়াবা সম্রাট’ নামে, উখিয়ার ঘুমধুম ইউনিয়নের মধ্যমপাড়ার বাসিন্দা, যিনি অল্প সময়ে কোটিপতি বনে যান। ইলিয়াসের বাবা ফজল মেম্বার নিজেই কুখ্যাত মাফিয়া, বড় ভাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। পুরো পরিবারই ‘৮ সিস্টার সিন্ডিকেট’-এর মাধ্যমে মাদকে জড়িত। চাচা আব্দুল সহ পরিবারের প্রায় প্রত্যেকে কোনো না কোনোভাবে মাদক সিন্ডিকেটে যুক্ত। ২০২০ সালে নবী হোসেন চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইয়াবা কারবারে নতুন মাত্রা যোগ করেন। ২৭ আগস্ট ৪ লাখ ২০ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন; পরবর্তীতে জামিনে ছাড়া পেয়ে আরও সক্রিয় হন। হক মার্কেট, হোটেল হাই পেরিয়ান ও ‘কে আর এস ইটভাটা’র শেয়ার মালিক; সবই আত্মীয়দের নামে। অর্ধশতাধিক যুবকের প্রশিক্ষিত দল দিয়ে পরিচালিত হয় সীমান্তপথে ইয়াবা আনা ও বিতরণ। পরিবার-নিয়ন্ত্রিত চক্র, যারা নিজস্ব বাহিনী, পাহারা ও ডেলিভারি সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের ভেতর মাদক ছড়িয়ে দেয়। ইয়াবার বড় অংশ পৌঁছে যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে; সেখান থেকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয় চিহ্নিত গডফাদাররা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারে নবী হোসেন যতটা ভয়ংকর, বাংলাদেশ অংশে ঠিক ততটাই ভয়ঙ্কর মো. ইলিয়াস। নবী হোসেনের পার্টনার হিসেবে ইলিয়াস এখন সীমান্তের অপরিহার্য অংশ। এদের মধ্যে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে চলা সাম্রাজ্য এখন মিয়ানমার-বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে গড়ে তুলেছে এক অদৃশ্য করিডোর। এই মাদক করিডোরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রতিটি রুটে মোতায়েন থাকে ভাড়াটে পাহারাদার, স্থানীয় প্রভাবশালী এবং কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা।সচেতন মহলের ভাষ্য, “মো. ইলিয়াস এখন শুধু মাদক ব্যবসায়ী নন- তিনি এই সীমান্ত করিডোরের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তার অনানুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রক। যেভাবে নবী হোসেন মিয়ানমারে ত্রাস ছড়ায়, ঠিক সেভাবেই ইলিয়াস সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে ভয়ঙ্কর এক যমজ প্রতিপক্ষ। প্রশাসন যদি এই জাল না ছিঁড়ে, তবে কেবল উখিয়া বা ঘুমধুম নয়- সমগ্র বাংলাদেশকে ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়তে হবে।”তবে অভিযুক্ত রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন রকম। স্থানীয় নেতা সাইফুদ্দিন বাহাদুর বলেন, “ইলিয়াসকে আমি তেমন খারাপ লোক মনে করি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন তাকে গ্রেফতার করতে চাইলে আমি তখন যদি বাধা দিই সেটাকে সেল্টার বলে। তার সাথে আমার যোগাযোগ কিংবা সম্পর্ক রয়েছে বল। তাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”অন্যদিকে সিরাজুল ইসলাম জানান, “ইলিয়াসের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে- এটা ঠিক। তবে সেটা কেবল ব্যবসায়িক কারণে। তার ইটভাটায় আমি আমার ইটের ব্যবসা পরিচালনা করি। এর বাইরে আমাদের মধ্যে আর কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।”এই বিষয়ে জানতে মো. ইলিয়াসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাচিং প্রু জেরী বলেন, “দলের হাইকমান্ড স্পষ্টভাবে জানিয়েছে- দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে। মুবিজ আব বাহাদুরের সঙ্গে ইলিয়াসের মতো একজন কুখ্যাত অপরাধীর সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”এমআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
গোলশূন্য ড্রতে প্রথমার্ধ শেষ আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার
গোলশূন্য ড্রতে প্রথমার্ধ শেষ আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার

শুরুতেই কলম্বিয়ান সমর্থকদের উচ্ছৃঙ্খলতা। তাতে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শুরু হওয়া নিয়ে দেখা দেয় সমস্যা।

বিএনপি-গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে উত্তেজনা, গলাচিপায় ১৪৪ ধারা জারি
বিএনপি-গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে উত্তেজনা, গলাচিপায় ১৪৪ ধারা জারি

গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ও বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার জেরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি Read more

ক্যাম্পাস সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে ছাত্রশিবিরের মতবিনিময়
ক্যাম্পাস সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে ছাত্রশিবিরের মতবিনিময়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতবিনিময় সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। Read more

মে দিবসের চিঠি বিলি করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার ২ দিন পর শ্রমিক নেতার মৃত্যু
মে দিবসের চিঠি বিলি করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার ২ দিন পর শ্রমিক নেতার মৃত্যু

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মোটরসাইকেলে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কার দুই দিন পর মোজাফফর নামে এক শ্রমিক নেতা নিহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন