খাগড়াছড়ির জনগুরুত্বপূর্ণ উপজেলা রামগড়ে ডাক্তার সংকটের ফলে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবায় অবহেলার শিকার এই অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক সেবা প্রত্যাশী মানুষ। যদিও এখানকায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত প্রথম সেক্টর ও বাংলাদেশ বিডিআর ব্যাটেলিয়নের সূচনা। শতাব্দীর এসডিও বাংলো এই  রামগড়কে নিয়ে গেছেন অন্য মাত্রায়। সুতরাং এ অঞ্চলে বসবাসরত  বিভিন্ন জাতী গুষ্টি মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ পূর্বক  স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা ছিলো তুলনামূলক ভালো কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী  আজ পর্যন্ত রামগড়ে সরকারি  চিকিৎসা সেবা থেকে বহুলাংশে মানুষ পিছিয়ে রয়েছে। প্রান্তিক এলাকাটিতে উন্নত চিকিৎসার  ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বড়জোর রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই পাঠাতে হয় শহরের দিকে। জানামতে, ২০১৩সালে রামগড় সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়, সেই থেকে রোগীদের সিট বাড়লেও বাড়েনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুল মান্নান জানান, কিছুদিন আগে আমি ইমার্জেন্সিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় বসেও ডাক্তার পাইনি, পরে বাহির থেকে ঔষধ নিয়ে চলে আসি।অপরদিকে রামগড় ছাড়াও পাশ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার বাগান বাজারের কয়েক হাজার মানুষও চিকিৎসা সেবা নিতে হয় এই রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। ডাক্তারের সংখ্যা কম থাকায় সেবা বঞ্চিত উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। যে পরিমান সেবা প্রত্যাশী মানুষ হাসপাতালে ছুটেন তার মধ্যে স্থায়ী ভাবে মাত্র ৩ জন ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা চালানো মোটেও সহজ হয়ে উঠেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।ফলে, রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। চিকিৎসক ঘাটতির পাশাপাশি নার্স ও টেকনিশিয়ান পদ খালি থাকলেও জনবল বাড়ানো সম্ভব হয়না কোনো এক অদৃশ্য কারণে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১০-১১ টা পর্যন্ত বসে থেকে চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত আসার কথা জানান, শাহিন নামের একজন। টিকেট নিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও ৩নং কক্ষে ডাক্তার না থাকায় ফেরত গেলেন এই ভুক্তভোগী। সূত্রমতে, ৩১ শয্যার রামগড় হাসপাতালে চিকিৎসক পদের সংখ্যা ১৩টি থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩জন ডাক্তার। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে মাঝে মধ্যে দুএকজন ডেপুটেশনে আসলেও নানা অযুহাতে প্রস্থান করেন রামগড় থেকে। আর মহিলা চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন একমাত্র ১জন ডাক্তার তিনি ডা. রোকসানা ইয়াসমিন।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, অ্যানেস্থেসিয়া,চক্ষু,অর্থোপেডিক, চর্ম ও যৌন বিভাগে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এছাড়াও গার্ড ও পরিচন্নতা কর্মীদের কাজে অবহেলায় ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের। ভর্তিকৃত রোগীদের ওয়ার্ডে  ময়লা আবর্জনা ঠিকমত পরিস্কার না করায়- টয়লেট গুলো অপরিষ্কারের কারণে  প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়ায় যা সুস্থ মানুষের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।এদের মধ্যে হিরালাল নামের একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ডিউটি না করে কাঠ ব্যবসা করার মত রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। তার বদলি হিসেবে বহিরাগত অন্য একজনকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন বলে স্থানীয়দের মুখে শুনা যায়। আর, দক্ষ গাইনি চিকিৎসকের অভাবে রোগীদের কেমন হাহাকার সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। মাঝে মধ্যে মহিলা বিশেষজ্ঞ পাওয়া গেলেও কয়েকদিন পরপরই বদলি হয়ে যান। বলা চলে রামগড়বাসীর জন্য এটা দুর্ভাগ্য। এছাড়া, হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতে নেই কোনো পুষ্টিবিদ, নেই উন্নত মানের পরিক্ষা নিরিক্ষার সু ব্যবস্থা। যদিও পরিক্ষা নিরিক্ষার যে ল্যাব খানা রয়েছে সেটিও অতি পুরনো লক্কর ঝক্কর। বড় সমস্যা তো অন্যটা যিনি ল্যাব টেকনিশিয়ান তার বিরুদ্ধে রয়েছে মনগড়া রিপোর্ট তৈরির অভিযোগ। হাসপাতাল থেকে অনেক বার সতর্ক করেও কোন প্রকার ফলাফল পায়নি কতৃপক্ষ। প্রতিনিয়ত রোগীদের পাঠাতে দেখা যায় ফেনী, চট্রগ্রাম ও ঢাকার দিকে। ফলে অধিক পরিমাণে টাকা পয়সার খরচের পাশাপাশি ব্যয় করতে হয় দীর্ঘ সময়। গেল বছর, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লোক দেখানো একটি সিজারিয়ান অপারেশনের সূচনা হয়েছিলো ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে। তাতে রামগড়ের মানুষ কিছুটা আলোর মুখ দেখলেও সেটা পরিবর্তীতে বন্ধ হয়ে যায়।বিশেষজ্ঞ গাইনি সার্জন যিনি অপারেশন করেছেন বেশিদিন তিনি রামগড়ে আর থাকলেন না। কোন কারণে ডাক্তাররা রামগড় ছেড়ে চলে যান সেটা অনেকেরই অজানা। ৫ লাখ টাকা খরচে অপারেশন থিয়েটার সম্পন্ন করেও কোনো কাজে আসছে না মানুষের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানাযায়, রামগড় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার রাখা না রাখা হস্তক্ষেপ বেশি করা হয় জেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে। শহরের ডাক্তার গুলো নিয়োগ দেওয়া হয় ঠিকই তদবির করে চলে যায় শহরের দিকে। অপরদিকে এসকল বিষয়ে জানতে মুখোমুখি সময়ের কন্ঠস্বর। রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে, এবং জনবল সংকট বহুদিনের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সবসময় জানানো হয়, দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার কথা আশ্বাস পাচ্ছি। তিনি আরো জানান, অনেকদিন জেনারেটর বিকল হওয়ায় সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছিলো আমাদের, নতুন ১০কেভির একটি জেনেরেটর বসানো হচ্ছে দু-এক দিনের মধ্যে। আশাবাদী ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিকঠাক হবে। এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
ঈদের ছুটি কাটিয়ে মেট্রোরেল চলাচল শুরু
ঈদের ছুটি কাটিয়ে মেট্রোরেল চলাচল শুরু

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন বন্ধ থাকার পর ফের রাজধানীর জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকাল ৭টা ১০ Read more

লাগামহীন দুর্নীতিতে আওয়ামী লীগে অস্বস্তি
লাগামহীন দুর্নীতিতে আওয়ামী লীগে অস্বস্তি

টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনি ইশতেহার দিয়েছিলো, তাতে গুরুত্ব পেয়েছিলো ‘দুর্নীতির Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন