কক্সবাজারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)-এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ঘুষ ও জালিয়াতির ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিরীহ মানুষকে ‘ফিটিং বাণিজ্য’ নামে পরিচিত একটি কৌশলের মাধ্যমে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করছেন ডিএনসি সদস্যরা।২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের কলাতলি কাঁচাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ ইয়াসিন নামে এক রোহিঙ্গাকে আটক করেন ডিএনসি এসআই মো. সানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি দল। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা মোস্তফা শাহরিয়ার ও গোলাম রহমান বাপ্পিকেও আটক করে ‘সহযোগী’ আখ্যা দেওয়া হয়। তবে অভিযানের পর তাদেরকে অন্ধকার স্থানে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘুষ দাবি করা হয়।বাপ্পির মা জানান, তার ছেলেকে ছাড়াতে এসআই সানোয়ার প্রথমে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। অনেক দেনদরবারের পর ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেও সন্তুষ্ট হননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ‘মাটির ব্যাংক’ ভেঙে ছেলেকে মুক্ত করতে হয়।ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ঘুষ আদায়ের বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি প্রশ্ন করেন, “ঘুষ নিয়ে আটককৃতদের কেন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে?” এরপরই তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গিয়ে মাদক মামলার আসামি বানানো হয়।পরদিন ২৫ নভেম্বর মামলা নং ৫৫(১১)২৪ দায়ের করেন এসআই সানোয়ার। রফিককে ১ নম্বর আসামি করে তার পকেট থেকে ২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের দাবি করা হয়। অন্যদিকে মামলায় উদ্ধার করা ৪ হাজার ইয়াবার মধ্যে বাকি ২ হাজার ইয়াসিনের কাছ থেকে উদ্ধারের কথা বলা হয়।চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, মামলার সাক্ষীরা জানান, তারা কোনো মাদক দেখেননি এবং তাদের দিয়ে খালি কাগজে স্বাক্ষর করানো হয়েছিল। অথচ সেই স্বাক্ষর ব্যবহার করে তাদের নামেই সাজানো বক্তব্য চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।এসব ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জীবন বড়ুয়া সাক্ষীদের প্রকৃত বক্তব্য না নিয়ে আগেই নেওয়া ফরম ব্যবহার করে চার্জশিট দাখিল করেন, যা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।প্রকাশ পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, মামলার এজাহার ও চার্জশিটে একই বক্তব্য থাকলেও সাক্ষীদের বক্তব্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। এতে “এজাহার মানেই চার্জশিট”- এই প্রথাগত অনিয়ম আবারও স্পষ্ট হয়।রফিকুল ইসলাম জানান, ঘুষ লেনদেনে প্রতিবাদ করায় তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তার দাবি, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে ফাঁসানোর বিষয়টি স্পষ্ট হয়, যা তিনি গোপনে রেকর্ড করেন।স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, এ ধরনের ঘটনা শুধু নিরীহ সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে না, বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে, ডিএনসি’র কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য মাদক উদ্ধার অভিযানের নামে অর্থ আদায়ে লিপ্ত। তারা কখনও মাদক উদ্ধার দেখিয়ে টাকা আদায় করেন, আবার সেই মাদক কারবারিদের কাছে পুনরায় বিক্রি করেন কিংবা ভবিষ্যতে নিরীহ ব্যক্তিদের ফাঁসাতে সংরক্ষণ করে রাখেন।তাদের দাবি, রফিকুল ইসলামের মতো প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর যেন ‘মাদক নাটকের’ বলি না হয়, সে জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচারিক ব্যবস্থা।মামলার বাদী এসআই সানোয়ার হোসেন এবং তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জীবন বড়ুয়া দাবি করেছেন, অভিযানের সময় ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতেই মামলা রেকর্ড এবং চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তবে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম।রফিকুলের ভাষ্যমতে, অভিযানের সময় তিনি দেখেছেন, এক আসামিকে অর্থের বিনিময়ে হাতকড়া খুলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই অনিয়মের প্রতিবাদ করতেই তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়।তিনি আরও জানান, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে তার একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। সে সময় গোপনে ধারণ করা কথোপকথনে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে আসে।এ বিষয়ে ডিএনসির সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল মোস্তফার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।এমআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ গ্রাফিতি নিয়ে ঠিক কী ঘটেছিল এনসিটিবির সামনে?
পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ গ্রাফিতি নিয়ে ঠিক কী ঘটেছিল এনসিটিবির সামনে?

বুধবারের ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার আরেক দল শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিকে বুধবারের Read more

ঢাকা-চট্টগ্রাম-বরিশাল মহানগর বিএনপি ও ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত
ঢাকা-চট্টগ্রাম-বরিশাল মহানগর বিএনপি ও ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

‘প্রতারণার শিকার’ হয়ে দেশে ফিরলেন শতাধিক সৌদি প্রবাসী
‘প্রতারণার শিকার’ হয়ে দেশে ফিরলেন শতাধিক সৌদি প্রবাসী

এবার ‘প্রতারণার শিকার’ হয়ে সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি। রিয়াদ থেকে ছাড়া একটি ফ্লাইটে করে সোমবার (২৮ এপ্রিল) Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন