জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহতের পর দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে প্রচার করা হলেও এ ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে টিআরএফ জানিয়েছে, ‘পেহেলগামের ঘটনার সঙ্গে টিআরএফের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন, তড়িঘড়ি করা এবং কাশ্মীরি প্রতিরোধ আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার একটি সাজানো প্রচারণার অংশ।’টিআরএফ জানায়, ‘পেহেলগামে হামলার পরপরই আমাদের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ও অনুমোদনহীন বার্তা প্রকাশিত হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এটি একটি পরিকল্পিত সাইবার অনুপ্রবেশের ফলাফল, যা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচিত কৌশলের অংশ।’এক্সে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের অতীত কর্মকাণ্ডেরও সমালোচনা করেছে গোষ্ঠীটি। তারা বলেছে, ‘২০০০ সালে ভারতীয় বাহিনী পরিকল্পিতভাবে চাট্টিসিংপুরা হত্যাকাণ্ড ঘটায়, যেখানে নির্মমভাবে ৩৫ জন শিখকে হত্যা করা হয়। পরে এর দায় মিথ্যাভাবে “উগ্রপন্থীদের” ওপর চাপিয়ে কাশ্মীরে সামরিক দমন-পীড়ন জোরদার করা হয়।’বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে হামলার ঘটনাও ঘটেছিল, যার পর বিশাল সেনা মোতায়েন করা হয়। পরে সেই ঘটনার পেছনে অভ্যন্তরীণ মদদের অভিযোগও ওঠে। সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা—যা ভারতের নির্বাচনের ঠিক আগে পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানো হয়। অথচ পরে ভারতেরই সাবেক গভর্নর সত্য পাল মালিক ওই ঘটনার গাফিলতি ও রাজনৈতিক ধামাচাপার বিষয়টি ফাঁস করেন।’উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। আহত হন আরও ১৭ জন। নিহতদের অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটক, একজন ছিলেন নেপালের নাগরিক। একে ২০০০ সালের পর থেকে কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সশস্ত্র হামলা মনে করা হচ্ছে।এ হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্যে উভয় দেশই একে অপরকে দোষারোপ করছে।টিআরএফ কারাকাশ্মীরকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ভারত সরকার বাইরের লোকজনকে আবাসিক মর্যাদা দেয়, যাতে তাঁরা জমির মালিকানা ও সরকারি চাকরির কোটার সুবিধা পান। অনেকের মতে, ভারত সরকারের এসব সিদ্ধান্ত পেহেলগামে টিআরএফের হামলার পেছনে কথিত ন্যায্যতা সৃষ্টি করেছে।কাশ্মীরের প্রচলিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বেশির ভাগের নামেই ইসলামি পরিচয় স্পষ্ট থাকে। তবে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামটি সেই ধারার ব্যতিক্রম। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে, এই নামকরণ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন করা হয়েছে, যেন গোষ্ঠীটির ‘নিরপেক্ষ চরিত্রের’ ভাবমূর্তি তৈরি হয়। ‘রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধ’ শব্দটির মাধ্যমে কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক দশকের বেশি সময় ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম নিয়ে কাজ করা এক পুলিশ কর্মকর্তা এসব কথা বলেন।তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছেন, বাস্তবে টিআরএফ পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘লস্কর-ই-তৈয়্যেবা’র একটি শাখা অথবা তাদেরই তৈরি করা একটি মুখোশ। ভারত সরকারেরও অভিযোগ, পাকিস্তান কাশ্মীরে চলমান সশস্ত্র বিদ্রোহকে সমর্থন দিচ্ছে। যদিও ইসলামাবাদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।পাকিস্তানের ভাষ্য, কাশ্মীরের জনগণের প্রতি তারা শুধু কূটনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে থাকে। পাকিস্তান পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার নিন্দাও জানিয়েছে।এসকে/আরআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর